70Th pOsT : কেদার ভাদুড়ী


(জন্ম-২৮ জুন ১৯২৫-)
(কাব্যগ্রন্থ-‘শুকনো জল’, ‘পাথরের স্লেট’ ,‘চারপুরুষ এক নারী’ , ‘তিনভুবনের প্রেম’ ,’এই তো ঠিকানা’ ,
’ শ্রীচরনেষু মা কবিতায় ‘,‘ নির্বাচিত কবিতা’ )

নেভি থেকে আমেরিকান এয়ারফোর্স,ওভারসিয়ার,চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে ডায়েটেশিয়ান, সেখান থেকে ব্রিটিশ এয়ারফোর্স, দ্বিতীয় পর্বে ইংরেজী ভাষার শিক্ষকতা। এমন কবিকে বা তার দর্শনকে কি বলা যেতে পারে? কবি ও সাহিত্যিক উত্তম দাশ ভারতীয় দর্শনের ‘অপূর্ববস্তুনির্মাণক্ষমাপ্রজ্ঞা’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন কেদার ভাদুড়ীকে আর তার কবিত্বকে আইডেনটিফাই করার জন্য; তবে  আমার মনে হয় কেবল প্রজ্ঞা নয় বরং একটা খোলামুখ একটা মুক্ত পরিসর একটা সদশয় কলম তার কবিতার উত্তরসাক্ষ্য হয়ে থাকবে; অনুশাসন মেনে কবিতা লেখেননি কেদার ভাদুড়ী, তার বেহিসেবী উদ্দাম  জীবনের মতই শব্দের বোধের লীনতাপেও কোথাও সেই বাহান্নপীঠের  অমৃতচক্র, কাহিনীর কার্নিভালেক্স,অথচ এই বহুজাতিক কথোপকথনে অদ্ভুত তপরতায় সামাল দিয়েছেন কথা ও কবিতার বমি আর আপেলের রসেদের,সেখানে লিনিয়ারিটি নেই,স্বজনহীনতা বন্ধুহীনতা যোগাযোগহীনতা নেই বরং অনুমোদন আছে একটি আন্তর্জাতিক কবিতার,বোধের লীনতাপের।প্রতিষ্ঠান বিরোধী নন বরং প্রতিস্ব পরিপন্থী বলা চলে কেদার ভাদুড়ীর প্রতিষ্ঠানকক্ষের নকশায় রচনায় পরিকল্পনায়;একটা হোলি অ্যালায়েন্সের মত তারাই যেন কেদার ভাদুড়ীর সম্পূর্ণ জীবনটাকে ট্রান্সলেট করছে।বারবার ঝুঁকি নিচ্ছেন ‘আমি’ থেকে ভয়ংকর মশকরা খুলে নিতে মিথ্যে জীর্ণ অনুঢ়া মেঘ খুলে নিতে। তবে আপনি কি এলিটিস্ট আর্টপিস খুঁজছেন কেদারের কবিতার  মালবিকা -মৃত্যুঞ্জয়ে? বাংলা কবিতার কোনো কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ড থেকে তবে কি খুঁজছেন অভিজ্ঞতার সাবজেকটিভ বর্ণনা? প্রিঅকুপাইয়েড ইনটেনশেন? না,তার কবিতার কাছে করতালি ক্রমশ মিলিয়ে এসেছে, মিলিয়ে এসেছে সাফল্য মরীচিকা, কোথাও কোথাও কেদার ভাদুড়ীর কবিতা উদবাস্তু বা ছিন্নমূল –যেন এক কনফিউজড রিয়ালাইজেশন,’আঁশ পড়ে আছে ফ্যাকাশে ও সাদা’,টাইটেল সং থেকেই সে এক বাক্যহীন বিগ্রহ,আহ্লাদিত পাঠক বা অ্যাল্ট্রুয়িস্টিক সার্কেলের অস্বীকৃত ফ্রেমওয়ার্ক সেখানে, তিনি সেই শৈলীনির্মাতা যার ভেতরে ভেতরে বুখারী জ্বলছে, যার কাংড়ির মধ্যে ছাইচাপা নিজস্ব এক বয়নভঙ্গী,পঠনভঙ্গী ,বিশ্লেষনের অগম্য এক পোস্ট জেনেরিক আগুন;স্বপ্নাদেশে লেখা কবিতা কেদারের নয়। না, তাঁর সাকরেদকেও তিনি ডাকেননি চালু সলিলিকি বা সনেটে বরং তার কবিতায় লেখনীর বেড়া ভেঙে বাচনই হয়ে উঠেছে “বৃষ্টি নামাবার কিংবা বহ্নিশিখার কোনো সংকেত”।তার পান্ডুলিপি প্রতিক্রিয়াশীল,বাইপোস্ট করে বাড়িতে পাঠাবার কোনো ব্যবস্থা  নেই,কেবল সকাল সন্ধ্যায় শিস দিলেই জানলাটা খুলে যাবে দরজাটা হাট হয়ে যাবে সুরারোপ হয়ে যাবে সমে শূন্যে।কেদার ভাদুড়ি কোথাও বাংলা কবিতার টাইটেল হোল্ডার হতে চাননি,বিষয়কেন্দ্র থেকে খুঁজে নিতে চাননি মেইনস্ট্রিম ব্যান্ডিং,বরং ‘মহাদিগন্তে’ পেয়ে গেছে তাঁকে,মাথার নিচে বেলুন নিয়ে শুয়েছেন কেদার,যেন সমস্তকিছু কনভেনশনাল বিষের শেষে এই তার বন্ধুত্ব;বাংলা সাহিত্যের নান্দনিক নীতিধর্মের কপচাত থেকে অসহায় ও নির্বোধ কাইট মেখে যে চিলটি উড়ে যায় তাই যেন কেদারের কন্ঠমনি, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে পারেন-“একটা কবিতা যখন একবার পড়েই লোকে বুঝে যায় তখন বাঁদরামির নীল ইতিহাস আমার জানা হয়ে যায়। আসলে কবিতা তো মেয়েমানুষ। যদি সুন্দরী হয় তো কথাই নেই।“ অথবা “…মাকাল ফল আমি দেখেছি; কি সুন্দর রূপ, রেখা ,রঙ । ভাঙলেই সোডোমের আপেলের থেকেও জঘন্য, মনে হয় ডেড সির কাছাকাছি ফলে কিনা,তাই” ।পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষহীন কেদার ভাদুড়ীর কবিতা তার রসও খুঁজেছে নিজের মত করে, বিবর্তনও চেয়েছে স্বকীয় ,সেখানে অনুকরনকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর অথরিটি আর তাই তাঁর ইমপালসকে কোনো ভাষাসাহিত্যের ল্যাবরেটরিতে পাঠাননি কেদার বরং শিল্প সাহিত্যের সবল বুদ্ধিধর যে উপত্যকা জুড়ে গাছগুলো পত্রহীন, ভাষাভূতের কংকাল যেখানে,সেখানেই গড়িয়ে দিয়েছেন তার পহেলগামের পাথরগুলো যারা গড়িয়ে গড়িয়ে অমরনাথ গেছে আর দেখেছে কবিতার পায়রাদুটো এখনও বেঁচে ;ওরা ঘুমায় না, একজন অভিজ্ঞতার দীপ্তি জড়িয়ে থাকে একজন প্রকাশভঙ্গির সজীবতা;গ্রস্থ উপত্যকার কবিতা নিয়ে জেগে থাকে এক নতুন কেদার দর্শনে ।

ময়ূর

বেশ মনে আছে, বাবা একবার এক ময়ূর পুষেছিলো ।
কারণ? বাড়িতে গোখরো সাপের বড়ো আনাগোনা, তাই ।
বাবা ওকে কিছুই খেতে দিতো না, তবুও
বর্ষাকাল এলে ফুলে ঢোল, পেখমে পেখমে ছয়লাপ ।

তবে সবসময় নয়,মা কাছে গেলে তবেই
এমন পেখম মেলে দিতো, দাঁড়াতো, নাচতো, দেখবার...।
প্রথমে বুঝিনি আমি ও বাবা, মা লজ্জ্বায়
বুকের আঁচল টেনে দিয়ে আড়ালে যেতেই, যার নাম রেখেছিলো কার্ত্তিক ঠাকুর ।

জীবনে এর চেয়েও বড় দেহভোগ, সৌন্দর্যশিকারী (ভিখারি)
কখনো দেখিনি । আমি মার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে...

মনে করতো বুঝি স্নেহ পরবশ হয়ে গেছি আমি
কিন্তু বাবা একদিন রাগে দোনালা বন্দুক নিয়ে গুলি করতেই মা,
যে কোনোদিন বাবার নাম মুখে আনেনি
বলে উঠলো ঃ  রা ঘ ব , রা ঘ  ব !

আর আমি এই কালকুট্টায় পালিয়ে এসে হবনব হবনব করে
নাম নিয়েছি সৌরভ । বোঝো ।

কাব্য

আমি যুবতীটিকে বললামঃ সাবান যে মাখো, সাবানেরও
একটা স্নেহভাব আছে । শাড়ি যে জড়াও, গায়ে
শাড়িরও একটা সূত্রভাগ আছে । সেই স্নেহভাব, সূত্রভাব-
নিয়েই তো ভালোবাসা, নয় ?

শুনে ও দেখি তখনো চুপ করে রইলো, যেমন যুবতীরা থাকে ।
দাবদাহ এমনই যে অরণ্যে লেগেছে আগুন, আগে ।

বইমেলা-৯৩, এবং কয়েক ফোঁটা আধুনিক অশ্রু

এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা
ফাঁকা মানে? বই আছে, বুকস, কিন্তু অক্ষরগুলো নেই
ফাঁকা মানে? লোকজন আছে, কিন্তু মানুষজন নেই
সজল পাইপ টানে, আমি চুটা , তামাক বিহীন
কাঁচাপাকা দাড়ির ভিতরে ধোঁয়া জমে, জমে লালন ফকির
অশোক পদ্যের পেছনে কয়েক সহস্র কাস্ক মদ্য উড়িয়ে এখন

এখন? বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা
ছড়া ও কবিতা যারা উগরে দিতো প্রতিপদে জ্যোস্নার ভিতরে
তারাও নিস্তেজ যেন, নিথর নীরব

তাদের  জীবন ঘোড়াগুলো, উটগুলো
ঐতিহাসিকের পাতা ছিঁড়ে, পাতা ছিঁড়ে খেতে চায়
লবণবিহীন

এমনি খবর
মালিনী যে মেয়ে, চিকন শাড়ির মতো আলো, এখন কোথায়
মালবিকা জানে, মৃত্যুঞ্জয় জানে, উত্তম জানে না
এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি  ফাঁকা
অতীন্দ্রিয় বলেছে জবর ঃ মস্য-নিগমে শুধু
হৃদয়ের বাইপাস ছিঁড়ে আঁশ পড়ে আছে ফ্যাকাশে ও সাদা

শেষ প্রেম

যুদ্ধে যাবো কাল । আজ এই হিমহিম ভয়ার্ত সন্ধ্যায় আমি
গৌরবের জয়গাথা পড়ে যাব শুধু? নাকি ইতি-
হাস ঘেঁটেঘুটে মিশরীয় সভ্যতার ফ্যারাও আমল থেকে
অ্যাসিরীয়, ব্যবিলনীয়, চৈনিক, মহেঞ্জোদারোর
স্পার্টান পদ্ধতি জেনে নেকড়ে ও রোমুলাস , রোম...মহাব্যোম
থেকে ফিরে আসে, হ্রীং । টেস্টের দরোজায় দেখি পিয়া, অলিম্পিয়া,
নিতম্বে উন্মুখ ।

আমি তাই দুই কাস্ক মদ্য নিয়ে ওর সামনে রেখে
বলে উঠি খা । ও খেলো, খেয়ে নিঃশেষে ফতুর করে দিলো পিপে ।
আমি ওর গা টিপে গা টিপে চুমোয় ভরে দি যোনি,
রহস্যের ঘ্রাণ, যা খাজুরাহোর মন্দিরে অক্ষত
আছে আজো, আর বিংশশতাব্দীর এই কালচক্র
শিল্প শিল্প বলে ঐতিহাসিকের ক্ষুধা, যদি দুষ্ট, আণবিক
কাল যুদ্ধে যাবো, বর্শাবিদ্ধ মরে যাবো, পড়ে যাবো ঘুড়ির পায়ের ক্ষুরে
মৃত্যুর অধিক ।

 

মদ্যপ

ঘরটায় তালা দিয়ে অমিয় বেরিয়ে পড়লো
সিগ্রেট কিনতে । একঠোঙা কাজুও কিনবে বোধহয় । শশা ।
আমি বললাম ঃ কিরে, টিভিটা বন্ধ করবি না ?
বললো ঃ আরশোলা ও ইদুঁর, বিছানাপত্তর,
ঘরের জানালা দরোজা, সিলিঙের শুনতে ইচ্ছে করে না?
আমি আর কোনো শব্দই জোগাড় করতে না পেরে
বললাম ঃ মদ্যপ ।


ভারতবর্ষ

মা এর বয়স বাহান্ন, বাষট্টি বা ওরকম, ওর বেশি হয়ে  গেলে সত্যি
মা আর মা থাকেন না হয়ে যান মাতা, মাতাজী , নতুবা বঙ্কিমী ভাষায়
মাতাঠাকুরানী ।

পূর্ণগিরি যাচ্ছি। চড়াই উতরিয়ে দেখি এক যুবা, সুঠাম সুন্দর ।
চলেছেন হেঁটে । মাথায় বিশাল এক ঝুড়ি, বেতের । ঝুড়িতে বসে আছেন এক বুড়ি
থুড়থুড়ি, ক্রিপলড, ফুলে ফলে আঁকা মাতাঠাকুরানী ।

প্রায়ই বলছিলেন ; চল বেটা চল সুন্দর ; দিমাক সে পাঁও চালাকে চল ।
দো ভাষীর কাজ করি তো ! মম কে বুঝিয়ে বলছিলাম ব্যাপারটা, তাই ।
পূর্ণগিরি কী? কে? বাহান্ন পীঠের সারবস্তু কোথায়? যমনা বা বেত্রবতীর
তীর থেকে এইসব বুড়ীরা কেনো আসে কেনো যায় ।

পুত্রের অহংকার তো বলিইনি, তবু
সেইদিন রাত্রেই নেহরু লকনৌ এয়ার পোর্ট থেকে দূরভাষ পেলেন;
না আগ্রা নয় আর, বুলন্দদরওয়াজা নয় কিছু,
কনট সার্কাস নয় ভালো, লালকিল্লা, মেরিন ড্রাইভ,
মীনাকষী টেম্পল, তাজ । দেখা হলো, দেখা হলো আজ
হোয়াট ইন্ডিয়া ইজ, হোয়াট ইণ্ডিয়া ওয়াজ । বাই...




উড়ান

পাখি,      গান গায় ।
পাখি,      গান গায় না ।

এ কিরকম হলো?
একবার বললেন, পাখ গান গায়।
আবার বললেন, গান গায় না ।

প্রথমটায় হ্রস্ব ই
দ্বিতীয়টায় দীর্ঘ ঈ, লক্ষ্য করেছো?

দীর্ঘ ঈ গান গায় না, মেয়ে পাখী কিনা, তাই ।
তবে সে কী করে? কী করে?
বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে , বসে থাকে,
তা দেয়, পরে বাচ্চা হলে,
মেয়ে  পাখীই কি,
ছেলে পাখীই কি,
উড়ান শেখায় ।

চাকরি

আমি মরতে-না-মরতেই আমার বউ, সুধন্যা
পাশেই ছিলো, শিয়রের কাছে,
বলে উঠলো, মৃদু নত এবং স্বাভাবিক সুরেই
বলে উঠলো, আঃ বাঁচলাম ।

আমি এখন সবে বুক ছেড়ে বুকের ওপরে উঠেছি ;
এখন, একটু বিশ্রাম নিয়ে সিলিং ভেদ করে
উর্ধ্বে চলে যাবো—

‘আঃ , বাঁচলেম !’ শুনে
এ এক আজীব বা
এ এক অবিনশ্বর সত্য, মনে হলো ।

শ্বশ্রুঠাকুরানী এলো, বললো;
বলেছিলেম না? প্রেম কর, প্রেম কর, প্রেম কর
বলেছিলেম না? এ বড়োকে বিয়ে কর,
চাকরি পেয়ে যাবি, অন হিউম্যানেটেরিয়ান , নাকি… কি বলে?
কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডস ?
পশ্চাদ্ভাবন করে লাভ নেই ।
বাইশ বছরের সুধন্যা ছাপ্পান্ন বছরের বুড়োকে
প্রেম করে বিয়ে করেছিলো শুধু কি এ কারণেই

আমি আগন্তুক স্বর্ণরথকে ফিরিয়ে দিয়ে
বাড়িরই বেলগাছে ব্রম্ভদত্যি হয়ে বসে
পা দোলালেম পা দোলালেম, কান মললেম, কান মললেম
পরিশ্রুত সারসের মতো শীর্ষাসনে অতি দীর্ঘকালে ।

গৃহ

একটি গৃহ বানাবার ইচ্ছে ছিলো কোন এক নদীর ধারে চওড়া
বাড়ীটি কি চওড়া, নাকি নদীটি-ই চওড়া?
পণ্ডিতগণ ভাবুন, তক্কে লেগে থাকুন, আমিও ইতিমধ্যে
বাগান সাজিয়ে নি ফুলফললতাগাছে বর্ণানুক্রমিক ।
পুকুর অবশ্য আছে, পুকুরেও নৌকা-গৃহ ঢেনকানলে
যেমন পাওয়া যায় ।

গৃহের প্রতিটি ঘরে বউ, বউ নয় বই ; দুঃখিত ! দুঃখিত
এ বয়েসে কি যে হয়, বই বলতে বউ বলে ফেলি ,
অবশ্য দুটোই এক, কেননা পাতার পর পাতা
শুধু সমারোহ জ্ঞানের ধ্যানের ভ্রমণের রহস্যের
জ্যামিতিক, ততোটা হিসাব কষিনি, কেননা সুক্ষভাগে
দুঃখ লেগে আছে কিঞ্চি অধিক ।


বৃক্ষরোপণের কাব্য

মাদামকুরীর মতো মুখ নিয়ে অমিতাদি আমাদের
                                   অঙ্ক নয়, ইংরেজি পড়ান ভালোই
কি তার উচ্চারন, কি তার চটজলদি কতাহ ! বলেন ঃ ভবাই,
আমি একটি পাখি দেখিতেছি, ডু ইট ইনটু ইংলিশ, ড্যু, কই
দাঁড়াও হ্যাঁ বলো , কী? আয়াম সীইং আ বডি ? ছাই !

বলেই, সবুজ ও হলুদ চক দিয়ে সত্যি সত্যি
                                   একটি পাখি আঁকলেন, পরে লাল
আমরা এতোগুলো ছেলেমেয়ে, কিছুই বুঝিনা, কাকে
বলে ভার্বস অব পারসেপসনস, কী তার রূপ,
                                   ইউসেজ, শুধু চন্দ্রমল্লিকা রুমাল
দিয়ে চোখ মুছলো ঃ আমি গিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা গাছ
                 লাগিয়ে দিলাম, পাতাবাহার, অমিতাদির ডাকে ।

বৃক্ষরোপণ মানেই অক্সিজেন, বৃক্ষরোপণ মানেই অক্সাইড,
                                       বৃক্ষরোপণ মানেই......, চুপ
আজকে বৃষ্টির দিন, বৃষ্টি হলো খুব ।

শিস

বাড়ির পাশ দিয়ে তো যাও, একটু শিস দিয়ো শুধু ।
শুধু শিস নয়, শিসে যেন শব্দ থাকে, সুর থাকে,
ভাষা থাকে, ভালোবাসা, গম্ভীর গম্ভীর কোনো বোধ,
বোধের অতীত কোনো? যেন থাকে স্বর্গসন্ধি , তাও?

বাড়ির পাশ দিয়ে তো যাও, একটু শিস দিয়ো শুধু
সকালে সন্ধ্যায়, এই কথা বলেছিলো মেয়ে; তাই
আমিও না মৃদু নীল উচ্চগ্রামে সকালে সন্ধ্যায়
ওর-ই গলায় ওকে প্রতিদিন শিস দিতে থাকি ।

শুনে মেয়ে স্থির থাকে কভু? জানালাটা খুলে যায়,
দরোজাটা হাট, জোড়াসাঁকো কেঁপে যায়, উত্তমর্ণ
অধমর্ণ মিলে যায়, দারিদ্র্যনিকাশী সত্যে কবি
বেদ ও উপনিষদ থেকে সাদা রক্ত বের করে
যেন ছবি, অসীম মরমী ছবি বাইশে শ্রাবণে
জনে জনে জনারণ্যে সমে শূণ্যে ক্রন্দনে ক্রন্দনে ।

সমকামিতার স্বপক্ষে

শত সহস্র ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক, নাগরিক নিমন্ত্রন পেলো
আর আমিই পেলাম না? এ কেমন হল জাঁ লাইলফ?
আমি দুনিয়াজোড়া কবিতা লিখি তুমি জানতে,
আমার নিমন্ত্রন তাই অবশ্যম্ভাবী ছিলো,
কিন্তু তুমি ভুলে গেছো, স্বাভাবিক ।
যেখানে বিদ্রোহ একচল্লিশ বছরের  সেই আটচল্লিশ থেকে
সেখানে বিপ্লবীদের মাথার দিব্যি দিয়েই বলছি আমার মনে করার কিচ্ছুটি নেই

কোপেনহেগেন ! কোপেনহেগেন ! তোমাকে শুভেচ্ছা
আমি একবার ড্যানিশ সসেজ খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো ।

তোমার বরের নাম, কাগজ়ে পড়েছিলাম, জোক ভকম্যান
জার্মান জার্মান গন্ধ পাচ্ছি যেন । সে যাই হোক
ম্যান তো বটেই, শুধু ম্যান নয়, হি-ম্যান তো বটেই ।
নইলে এমন করে সমকামিতাকে স্বর্গভূমে নিয়ে আসতে পারতো না ।
আসলে সভ্যতা জানুক, শিক্ষাও জানুক, সংস্কৃতিও জানুক
যেখানে দেহ ও মনের মিল, মিলন, সেই তো বিবাহ
আমরা অপোগণ্ড, দেহ বলতে স্ত্রী বুঝি, মন বলতে পুরুষ
কোপেনহেগেন! কোপেনহেগেন ! তোমাকে শুভেচ্ছা
আমি একবার ড্যানিশ পনীর খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো ।

মাদাম ওয়াধোওয়া

ধরা যাক
মহিলাটির সঙ্গে, ভদ্রমহিলাটির সঙ্গে
প্রথম দিন আলাপ হলো, একটু ।
দ্বিতীয় দিন তার-ও বেশি ।
তৃতীয় দিন আর-ও ।
চতুর্থ দিন ......

ধরা যাক
ভদ্রমহিলাটির নাম মাদাম ওয়াধোওয়া ।
ধরা যাক বাংলা বলতে পারেন ভালোই ।
বললেন ঃ আপনি গাছে উঠতে পারেন?
বললেন ঃ আমার বাড়িতে একটা পলাশ গাছ আছে ।
তার একটা ডাল, বেশ মোটা ডাল
আমার ব্যালকনির গা ঘেঁসে, প্রায় গা ঘেঁসে
সোজা চলে গেছে সীমান্তের সন্ধানে ।
মাঘ ফাল্গুন এলে ফুল ফোটে ।
আমি চন্দ্রালোকিত জ্যোস্নায়
দরোজা জানালা খুলে
গভীর গহন তাকিয়ে থাকি, একাই ।

তারপর?
কবি ও প্রাবন্ধিক উত্তম দাশের দেয়া
পঞ্চম মেরুকরন নিয়ে
গলায় মিষ্টি মিষ্টি ঢেলে বললেন ঃ
আপনি ডাক ও ডাহুকের স্বাদ
কিছুই বোঝেন না।
আপনি বড় বোকা ।
বলেই ষষ্ঠ ফ্যারাও, তার সঙ্গে
তুতেনখামেনের পিরামিড দেখতে
হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন, গীর্জায় ।


*******************************