........তন্ময়
দত্ত.......
......যদি কেউ শিউরে বা দয়ায় ভিক্ষা দেয় শরীর পেতে
ভিক্ষা নেব, বোধ নেবনা । এমনি, যতদিন না আমার রক্ত
ফুরোয় কিম্বা তুমিই বিষিয়ে মরো আমার আবশ্যিক লালায়……।
১৯৬৪।
১০ই জুন। IO W A সিটি থেকে কবি গদ্যকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই
চিঠি। লিখলেন হাংরী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে যা গ্রহন-বর্জনের প্রশ্ন আপেক্ষিক কিন্তু এ
চিঠির আপ্তকথাতেই থেকে গেল খসে পড়া এক কবির নির্বিকার সংরক্ষন ,‘আমার চেয়ে কমবয়েসীদের মধ্যে একমাত্র তন্ময় দও এসেছিল বাংলা কবিতায় তলোয়ার হাতে, আমার চেয়ে অন্তত ছ
বছরের ছোটো, জীবনানন্দের পর এত শক্তিশালী
কবি এদেশে আর কেউ আসেনি, প্রচণ্ড অভিমান করে চলে গেছে। সে জন্য এখনও আমি অপরের হয়ে
অনুতাপ করি।` …কে এই তন্ময় দত্ত ! বাংলা কবিতা জানে না।জানাতেও পারে না। কারন বাংলা কবিতা
নিয়ন্ত্রিত মানুষের, যেখানে ইম্প্রেশনিজমের নিয়মে কবি ও কবিতার মূল্যায়ন সেখানে
তন্ময় দত্তের মত শিকড় সম্পৃক্ত বিশুদ্ধতা যে কেবল বিদীর্ন উদাসীনতার কিছু ছায়ামুখ
হয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক।
আশ্চর্যভাবে তাঁর নিরুদ্দেশ যাত্রার না কোনো হদিশ করেছে বাংলা সাহিত্য জগত না গত ষাট বছরে এই শীর্ণ সন্ন্যাসীর অতিরিক্ত অন্ধকারে আলো খুঁজতে বেরিয়েছে বাঙালী পাঠককূল। তিনি চলে গেছেন পরিভাষাহীন, সত্যিকারের কবিতার দিকে । স্বাভাবিক ভাবেই তার কবিতার বিরাট ভাণ্ডার বলে কিছু নেই । অথচ ক্ষনস্থায়িত্বও যে প্রথম শিল্প হতে পারে , নির্বস্তুক আকরিক হতে পারে তা হয়ত তাঁর সমসাময়িক কৃত্তিবাসীরাই বলতে পারবেন , বলতে পারবেন সমসাময়িক ষাটের কবিরাই ; অভিমান ক্ষুধা নিয়ে সরে যাওয়া নাকি অমূর্তের ভেতর আবহমানকে তুচ্ছ করে আনন্দ খুঁজতে যাওয়া ! — কাব্যচর্চার শ্রুতি প্রতিশ্রুতির মাঝে এমন হাজারো ছাই হয়ে পড়ে আছে তন্ময় দত্ত নামের এক বিদ্রুপ এক আবিস্কার । কবিতা তো অনেকদূর গড়িয়ে যাবে , উৎকৃষ্টতার দিকে চলে যাবেন কবিও, কিন্তু নিরস্ত্র হয়ে আমরা একবারও কি মুখোমুখি হব তন্ময় দত্তের মত মোমগুলির মল্লিকাগুলির ! হয়ত ঝরে যাওয়ার ভয় অথবা গলে যাওয়ার,বাংলা কবিতার প্রকৃত সন্তানদের ছায়ায় প্রতিনিয়তই অল্প হেসে ঢুকে পড়ছি আমরা । প্রতিনিয়ত এক অলীক সান্দ্রতায় এক অমূর্ত দ্বন্দ্বে ।
আশ্চর্যভাবে তাঁর নিরুদ্দেশ যাত্রার না কোনো হদিশ করেছে বাংলা সাহিত্য জগত না গত ষাট বছরে এই শীর্ণ সন্ন্যাসীর অতিরিক্ত অন্ধকারে আলো খুঁজতে বেরিয়েছে বাঙালী পাঠককূল। তিনি চলে গেছেন পরিভাষাহীন, সত্যিকারের কবিতার দিকে । স্বাভাবিক ভাবেই তার কবিতার বিরাট ভাণ্ডার বলে কিছু নেই । অথচ ক্ষনস্থায়িত্বও যে প্রথম শিল্প হতে পারে , নির্বস্তুক আকরিক হতে পারে তা হয়ত তাঁর সমসাময়িক কৃত্তিবাসীরাই বলতে পারবেন , বলতে পারবেন সমসাময়িক ষাটের কবিরাই ; অভিমান ক্ষুধা নিয়ে সরে যাওয়া নাকি অমূর্তের ভেতর আবহমানকে তুচ্ছ করে আনন্দ খুঁজতে যাওয়া ! — কাব্যচর্চার শ্রুতি প্রতিশ্রুতির মাঝে এমন হাজারো ছাই হয়ে পড়ে আছে তন্ময় দত্ত নামের এক বিদ্রুপ এক আবিস্কার । কবিতা তো অনেকদূর গড়িয়ে যাবে , উৎকৃষ্টতার দিকে চলে যাবেন কবিও, কিন্তু নিরস্ত্র হয়ে আমরা একবারও কি মুখোমুখি হব তন্ময় দত্তের মত মোমগুলির মল্লিকাগুলির ! হয়ত ঝরে যাওয়ার ভয় অথবা গলে যাওয়ার,বাংলা কবিতার প্রকৃত সন্তানদের ছায়ায় প্রতিনিয়তই অল্প হেসে ঢুকে পড়ছি আমরা । প্রতিনিয়ত এক অলীক সান্দ্রতায় এক অমূর্ত দ্বন্দ্বে ।
ভাই অনাময় দত্তের অকাল প্রয়ানে
শোকাস্তব্ধ তন্ময় দত্ত ‘মৃত্যু, তুমি গর্বিত হয়ো না` শিরোনামে লিখেছিলেন-‘একদল
লেখেন সুন্দরের আকর্ষণে আর একদল সত্যের সাধনায়। সব কবিরই প্রায় লেখার উৎস দুঃখ,
কিন্তু যিনি দ্বিতীয় দলের কবি তিনি নিরতিশয় দুঃখী। জগতে কদাচিৎ কোনো কোনো মহৎ কবি
জন্মায় যিনি এই দুই ধারার সমন্ব্য় করেন, যেমন কখনও কখনও রবীন্দ্রনাথ-শেষ দিকের
জীবনানন্দ, কিন্তু দ্বিতীয় দলের কবিদের মধ্যে যিনি এই সমন্বয় করতে অসমর্থ , তাঁকে
আমার ধারনা ছিন্নভিন্ন হয়ে নীরবতার সাধনায় সরে যেতে হয়।` দু
মিনিট হাঁটতে হাঁটতে তিনিও যেন চলে গেছেন শিরস্ত্রানহীন আজকের শীতে। কৃষ্ণপথ থেকে
বেছে নিয়েছেন ছায়াম্লান কামড়, ফিরতে চাননি লোকালয়ে, শুভেচ্ছার দাগে। তাঁর কবিতা
শুভকামনার নয়, অনাবিষ্কৃত অমূর্তের নয়।পীড়নের দ্বৈধের সমান্তরাল একটা অ্যালিউশকে
অন্বিত করেছেন স্মৃতি স্বপ্ন সম্পর্কের বুরজ়ে। কলকন্ঠের বিপুল পরিধির থেকে বেরিয়ে
এসে টুপি খুলে রেখেছেন বাবলাকাঁটার নিচে। শব্দে কোথাও ক্রন্দন নেই অথচ কান্নার একটা বাড়ি আছে একটা লতিয়ে ওঠা
মধ্যাহ্নতন্দ্রা আর বাদবাকিটুকু যেন তাকেই সূত্রায়িত করে ডেকে নিয়েছে বিকলাঙ্গ
পাখির দিকে প্রচ্ছন্ন ফুলমালার দিকে। প্রবীন কবির মত তন্ময় দত্তের জ্ঞানের
স্থৈর্য দেখার সৌভাগ্য হয়নি বাংলা কবিতার অথচ তাঁর স্বকৃত বিচ্ছিন্নতার ভেতরই
পাঠককে নিয়ে মাধবানন্দের মত তিনি চলে গেলেন চিরকালের ছাড়াছাড়িতে। কবির
কোন বেহেস্ত হয় না,ধর্মপথ হয় না, অলিন্দ দিয়ে কবি আসে আর নানায় দফায় জলবায়ু পেরিয়ে
আমাদের নিয়ে চলে তার অশ্রুত নির্যাসে। কবি একটি ঘটনা;ঠিক যেমন বৃষ্টি পড়া
রোদ ওঠার মত।তার সাথে আড়ি হয়না। সমস্ত কাদায় গাল রেখে শুয়ে
থাকে তন্ময় দত্ত, কান্নার হাটে সঙ্কুচিত ডোম যে তিনি, শেষ মালাকার; তিনি ফেরার
দরজা খুললেও তাঁর কাছে পাওনা রয়েই যাবে কবিরঙের অনিবার্য একটা থাকা …
আন্তর্জালে
প্রথমবার ... বাকের উপহার ... তন্ময় দত্ত ।
নাব্যতা
আমি তোমাকে কী অত্যন্ত ভালোবাসতাম
এই কথা আজ বলতেও
ইচ্ছা করে না। কেননা এও শুধু
অধিকার ব্যর্থতার কষ্ট ,তুমি যে ছিলে
শুধু তাই অচেতন বিমুগ্ধ হয়ে বুঝতে
চাই, তুমি নিঃশেষে হেরেছ,
কোন অন্যায় সপ্তরথীর মার, আমি কার
মুণ্ড কাটব, অন্যান্যদের
সাথে বৃহত্তম জুয়ায় জিতে অপ্রতিভ
ঘুরছি; অথচ এই হারা জেতায়
আমি কখনো যাইনি, কেননা চেয়েছিলাম
শ্রমের কার্যকারক পুরস্কার,
ঝড় আসতে পারে জেনেও আমার নৌকায়
নিরালা পাল বেঁধেছিলাম
ঝড় না এলে কোথায় যেতাম, কার
স্রোতে আজ আর বুঝি না,যেন
ঘটলেও পারত,ঘটে গেল।
শূন্যহাতে বসে আছি। এই যে বসে
থাকা এই যে কষ্ট এও এক নতুন
নৌকো বাওয়া, হয়তো বন্যাস্রোতে,
তবু নৌকো বাওয়া, আর ইচ্ছে
যায় না, হৃদয় আর অচেনা জল ভাঙতে
চাই না আমি দুঃখী, আমার
বড়ো কষ্ট,আমায় ক্ষমা করো একথা
কাউকে বলা যায় না কেননা
আমার ভাগ্য কিংবা স্বভাব
প্রবাহিত পাহাড়গুলি অচলা হৃদয়ে পেতে
চায়, ছিন্ন হাতে শৃঙ্খলায় বাঁধতে
চায়, বাঁধা যায় না জেনেও ,যেহুতু
জুয়া কার্যকারণ মানে না, হয়তো
বাঁধা যায়, এই আতঙ্ক ও আশা
আমায় বুকে হাঁটায়;মুক্তি নেই এই
কথাও মুক্ত করে না;
হৃদয়ের সব দরজা খুলি কি সব বন্ধ
করে রাখি কিছুতে বুঝে পাইনা
কিসে সুবিধা হয়,নৌকা চলে।
খেলা
বেড়ালকে কখনো কোনায় নিয়ে ফেলিসনা,
মা বলতেন,
ওরা মরিয়া হয়ে যায়। আমি তোমায়
কোনায় নিয়ে গিয়েছিলাম,হৃদয়
এখন আমার কন্ঠনালী কামড়ে ঝুলছো,
রক্তাপ্লুত, জীবন্ত,
একটি গলগণ্ডের মতো; এখন তোমায়
নিয়ে লোকালয়ে ফিরি
কী-করে, তুমি আর বেড়াল নও, আমি আর
মানুষ নই, দুই জনে
একটি রক্তময় যুগ্মতা। বেড়াল,
আদুরে বেড়াল,
যদিও কষ্ট হচ্ছে, আমি জানি তুমি
রাগ করোনি, তুমিও ভয়ে
কাঁপছো, এত ভালোবাসারই বিকার, তাই
আমারো আর একটূও
ক্ষোভ নেই, যদিও কষ্ট হচ্ছে, খুব
কষ্ট হচ্ছে, আমি জানি
আমার ভুল কিছু হয়নি, কেননা মায়েরা
সব বোঝেন না, তোমায় যদি
কিনারা অবধি না ঠেলে নিয়ে যাই,
আমি কেমন করে
বুঝবো তুমি কখন ঝাঁপাবে, এখন সেই
মূর্হুতটা স্পষ্ট
দেখতে পাচ্ছি, যার এ পারে আমার
মুখ ও বিজয়ী হাসি, আরপারে
আমার গলায় ঝুলছে বেড়াল,ক্ষিপ্ত
গলগণ্ড, রক্ত, বেড়াল।
জানিনা আর কখনো খেলার সুযোগ আসবে
কিনা, ভিক্ষার ঝুলির
মতো হয়তো এখন গলায় বেড়াল গেঁথে
ঘুরতে হবে, আমি ও উদাসীন
বেড়াল, দৃশ্যটা একটু অদ্ভুত তাই
অপ্রতিভ
হয়ে আছি, কিন্তু আমিতো জানি আমার
গলায় বেঁধা প্রতিটি দাঁত
নিরভিমান,অন্যমনস্ক, তাই রাগ বা
ভয় নেই। যদি
কখনো তোমার ভয় কেটে যায়, বোঝো আমি
কিছু মনে করিনি, আবার
মাটিতে নেমে আসো, এবার আমরা খুব
সহজ কিন্তু
নিবিড় কোনো বোঝার মধ্যে থাকবো, আর
যদি নাই নামো
যদি তোমার উত্তেজনা না যায়,
আমরা এমনি ঘুরবো, প্রতি মেলায়
যাবো, যদি কেউ শিউরে বা দয়ায়
ভিক্ষা দেয় শরীর পেতে
ভিক্ষা নেব, বোধ নেবনা। এমনি,
যতদিন না আমার রক্ত
ফুরোয় কিম্বা তুমিই বিষিয়ে মরো
আমার আবশ্যিক লালায়।
রাত্রিতে
স্বপ্নেতে কে এসেছিল? ঘুম ভাঙলে
দেখি
মুখ অশ্রুকলঙ্কিত হয়ে আছে।
স্বপ্নে কেউ এসেছিল, যার
হাতের গভীর জলে হাত ডুবিয়ে
বসেছিলাম? শুনেছি
স্বপ্নের হ্রদ দুলে উঠে এলানো
বাগানবাড়ি দেখায়, যেখানে
হাসিগুলি যৌথ, দুঃখ কটি বিকলাঙ্গ
পাখি
সেবায় হৃদয়গত বাগান বাগান নয়,
আসলে প্রচ্ছন্ন ফুলমালা
যা মরে গেছে বা আজো ফোটেনি সব
বুকে ধরে আছে; কুয়াশায়
জ্যোৎস্নায় বাইরে মুগ্ধ শোভা,
কিন্নরেরা খেলা করে, শাদা
ফুল ঝরে যায়, সাপগুলি সুকুমার
রমণে নিয়ত, হৃদয়েরা
সারি সারি পাখা ধোয় শান্ত হয়ে।
বৃষ্টিতে ভাসান হলে পর
গরীব খড়ের হাড় বুকে নিয়ে শুয়ে
আছি। যে জাতকুমোর
তার হাত মুগ্ধ স্বেচ্ছাচারী
যন্ত্র,হাওয়ায়, পঙ্খের দাগ, যাকে
ভালোবাসা, সে কোনো জটিল জলে চলে
গেছে,ফেলে যাওয়া
নীলিমায় কেন
হৃদয় হাঁসের মত অসাড় পড়ে থাকেনা,
কেন ওড়াউড়ি, ব্যথা
কেন পরিশ্রম করে কাতর স্তম্ভিত
চেনা দীনতায় , ঘুমে
কাকে যে কান্নায় গলা মেলায়, পাখা
ঝাপটায়,কে সে প্রিয়কথা
যার নীহারিকাময়
মুখ দেখা যাবে না, বাঁশি
শুনেছিলাম কি? রহস্যের বুক
থেকে উঠে এসে নিশি ডেকে যায়
দুয়েকটি হৃদয়কে, তাদের কী শেখায়
এই অহেতুক নির্বাচন?
এখন কি জাগরনে আছি নাকি সম্মোহিত
চিরকাল কিছুতে বুঝিনা, এই নষ্ট
অরাজক দৃশ্য একি স্বভাবের ঘুম?
মাঠ
কে তুমি ভেঙ্গে আছো ছিন্নলতার
মতন, তুমি কার
বিধবা গো? ইচ্ছা হয় তোমাকে
স্বান্তনা দিই,মুখ ফুটে
মিথ্যাগুলি বলি, আমি তোমাদের
ভালোবাসি, তোমাদের
সমস্ত কাদায় আমি গাল রেখে শুয়ে
আছি, কান্নার হাটের
সঙ্কুচিত ডোম আমি, শেষ মালাকার;
যতো হাত রাখি চুলে
যতো কান্নার ওঠানামা দেখি,মনে হয়,এমন
গভীর কোনো মাঠ
আছে যেখানে পিঁপড়েগুলি পরস্পরকে
চেনেনা,বা চেনে,
জন্ম সকলকেই অসম্ভব পরিশ্রমী করে
রেখে গেছে,কিছুতেই
অজ্ঞান হওয়া যায় না। দল বেঁধে
শিউলির বোঁটায়
পুতুল ছোপাতে খুব ব্যস্ত যারা
দেখে এসেছিলাম
কিছু বুঝেছিলাম, তারাও
আকালে বিকল হয়ে আছে যেন, ওই সব
মাঠের
চারিধারে মর পিঁপড়েগুলি অত্যন্ত
যত্নের সাথে ফাঁকি
দিয়ে যেতে চায় মাঠের বুকের কোনো
রহস্যকে, মৃত্যু কি?
ঠিক মৃত্যু না, আরো কোনো অদ্ভুত
জ্যোৎস্না সব ভুল
যেন না করে দেয়, ভালোবাসা, ধাবমান
যৌনতা, রক্তের
স্বস্তির লোভ, নেশাগ্রস্ত চাষী,
যদি ক্ষেত ভরে অবান্তর ফল
কখনো বা ফলে, অন্যে এসে খেয়ে
যাবে, বা খাবে না।
কান্নার
চরমপন্থিতাগুলি কী শেখায় তবে, আমি
কী জানি চেষ্টার
মটকানো ঘাড় দেখে, ফুল তুলে হাজা
হোলো, অথচ সে ফুলও
মানুষের মতো ভয় দেখায়, বিধবা গো,
যে সাক্ষীগোপাল
নুপুরের শব্দ তুলে বলেছিল পিছে
পিছে আসবে, তাকে কি
মুখ ফিরিয়ে অমূল দেখে নিতে চেয়ে
ভুল করেছিলাম, যে লোভ
অনেক শিখিয়েছিল,সেই কি শত্রুতা
করে গেল শেষবেলায়?
স্বভাব
পরিশ্রম করায়, রহস্যের মাঠে মরা পিঁপড়েগুলি, জ্যোৎস্না পড়ে আছে।
যন্ত্রনা
কেন ভালোবাসলাম তাকে?
এত ব্যাথা তাও সয়ে, এত পথ
হেঁটে
আমি কেন হারালাম আবার
আমাকে।
আমি কেন হারালাম। আর তো
আমরা কিছু নেই
যা ছিল সে নিয়ে গেছে সব
শান্তি কি পাব আমি সব
হারালেই।
কোথায় পালাব আমি। এতকাল
নিজেকেই খুঁজে
ক্লান্ত হলাম শুধু, কী
পেয়েছি আমি।
কিছু নেই কিছু নেই ঘাসের
সবুজে।
২
কেন আমি এলাম এখানে, আজকের
এ কলকাতায়,
কাউকে চিনি না আমি, আমাকে
চেনে না এরা কেউ
আমি যে একাই জ্বলি কী করুণ
দারুণ জ্বালায়।
আমাকে লুন্ঠন করে এ কোথায়
নিয়ে এল এরা
আমার কত যে ব্যথা, কিছুই
বোঝে না, হায়, কেউ
এতদিনে জানলাম এ পৃথিবী
জাল দিয়ে ঘেরা।
যাকে আমি চিনতাম কই সে তো
থাকে না হেথায়
আমাকে বিকালো কে যে এখানের
এই বুড়ো হাটে
কী আমার অপরাধ। কে আমাকে
সঁপে দিল এ কলকাতায়।
শিল্পী
কাঁধেতে ফুলের ছাতা,
শিল্পী চলে একা পথ দিয়ে
মুখ হয়তো দেখা যাবে
অবিমৃষ্যকারী ভবিষ্যতে,
ততদিনে মুখ না; আপাতত
ফুলের ছাতাই
শিল্পীর অদ্ভুত মুণ্ড,
জন্মের রক্তের চেনা লোক
নিশ্চিত রয়েছে পাশে, কায়িক
সংস্থান জানে, ঠিক,
ধড়, নাভি, লিঙ্গদেশ;
ভালোবাসা করে চারিদিকে।
শিল্পী, তুমি কাহাদের?
মাতা পিতা রয়েছে নিশ্চিত,
কখন ভিখারি হল, বড়ো দুঃস্থ
হলদে আলো হাতের শরীরে,
কেউ মূর্খ কেউ ভালো একাকার
পরিচিত জন;
রমনী লোভায়ও যদি, কৃশ লোভ
শিল্প গড়ে গেলে
চরিতার্থ হয় কিছু? নাকি
নিম্নে বীজের ভাণ্ডার,
প্রকৃতি যা দিয়ে দেহে
পাঠিয়েছে সংসারে, দুয়ারে,
যাবে না অক্ষয় রাখা? দিতে
হবে মাংসে কিংবা সাদা
গভীর কৃত্রিম করে? নিশ্চিত
কি, হে চিরকুমার,
হয়েছে সৃষ্টির দায়ে?
মাংসময় জন্ম এই, তবু
ঈশ্বরে হারায়ে যেন রেখে
যাবে বিস্ময় মন্ডল,
যা বাড়ে অন্যের হাতে; সেই
সন্তানের স্পৃহা; উত্তরাধিকার,
আমার দুঃখের গান, রাখা হয়
কারো কারো কাছে,
যেন রেখে যেতে হয়, দায়িত্ব
বর্তেছে যেন বড়।
(কবিতা সংগ্রহে বিশেষ ঋণ স্বীকার ও ধন্যবাদ -কবি নীলাব্জ চক্রবর্তীকে)
************