74Th pOsT : শ্যামল সিংহ



(১৯৪৯-২০০৩)
(কাব্যগ্রন্থ- চাঁদ ও খোঁড়া বেলুনওয়ালা , সূর্যাস্ত আঁকা নিষেধ ‘ ,
জেগে উঠছেন বাঘাযতীন’ )


‘একটি সংঘের নাম-শ্যামল সিংহ’, যদি এমনই দেওয়া যায় কোনো একটি আলেখ্যের শিরোনাম তবে কি জীবন্ত কোলাহলের ভাষ্য উঠে আসবে শব্দের বমনে ,বচনে? নাকি ঘাসের মত নড়ে উঠবে কেবল একটি একলা মানুষ ,মাতৃসদনের দিকে ফিরতে চাওয়া মধ্যরাতের একটি একলা মানুষ! শব্দের আঁশ রেনু ধরে ধরে তাঁর যেন কেন্দ্রে ফেরার অভিজ্ঞতা। তবে কি একটি গভীরতার কাছে যেতে গিয়ে ধার করা হচ্ছে একটি শূণ্যতা! শূণ্যতার সামনে দাঁড় করানো হচ্ছে আমাদের? আশাহীনতার সামনে? না। বিশাল সংবেদনের সামনে তিনি যেন এক voyant এক দ্রষ্টা যিনি মাটি খুঁড়ে দেখতে চাইছেন মাটির গভীরে কতটা জল,দেখাতে চাইছেন অস্থির অনিশ্চয়তায় অর্জিত কতটা স্বাধীনতা।মূর্ত অতিক্রম করে যিনি বিলীয়মানের বিশ্লেষণে , তিনি নিজেরই আশ্রয়শাখা হয়ে উঠছেন,উপহারহীন সন্ধ্যার মাঝে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন পাখির জন্মদিন আর আকাশভর্তি জামার গল্প ; তিনি তো নিঃস্ব নন,গাঢ় বিষাদের নন,বরং তিনি মাটির মাঝে খুঁজে ফিরছেন মৌনতার ভরা সংসার,মানুষের যাওয়ার শেষে পরিচয় করাতে চাইছেন বিযুক্তি ও পতনের শেষে পড়ে থাকা মহ কবিতাগুলো। যদি কোনো কবিকে প্রশ্ন করা হয় কবিতা কি? আর তার উত্তরে তিনি চুপ থাকেন, সেই মৌনই শ্যামল সিংহ । যার প্রতিটা অনুকবিতার আকারে মাটি ছেড়ে উঠে আসছে অনুক্ত স্বমেহন। মানুষের চেনার মাঝে নেশার মত যারা খুঁজে পেতে চাইছে অচেনাটুকু।

কিছুদিন আগে জেন গল্প পড়ছিলাম।তা বুদ্ধের শিষ্য সুভূতিকে নিয়ে সে গল্প। তিনি নাকি শূণ্যতার বোধ অর্জণ করেছেন আর সেই শূণ্যতার ভাব নিয়েই গাছের তলায় ধ্যানে মগ্ন।এমন সময় দেবতারা খুব ধীর কন্ঠে বলে উঠল-‘আপনার শূণ্যতাসূত্রকে অভিনন্দন জানালাম’। সুভূতিও বললেন-কই আমি তো কোনো শূণ্যতাসূত্র আলোচনা করিনি! দেবতারা বললেন-একদম ঠিক,আপনি শূণ্যতার আলোচনা করেননি আর আমরাও শূন্যতা শুনি নি। এই হলো সত্যকারের শূণ্যতা।না, কোনো বোধিলাভের ব্যাখায় নয়,বরং বিশ্ব নিয়মের আবহমানে দাঁড়িয়ে শ্যামল সিংহের শব্দের বোধের অর্বুদে নির্বুদে বসে থাকা শূণ্যতারা কোথাও যেন আমাদের এমনই আভিকার্ষিক চেতন থেকে কিছুটা অস্পষ্ট কুয়াশার দিকে নিয়ে চলে।যেখানে শোনা যায়না কিছু অথচ রহস্য খুলে যায় নিশ্চুপ কবিতাবীজের তৃষ্ণা ও আকাঙ্খা নিয়ে, শ্রান্ত ও স্থিরতা নিয়ে। শূন্যতা লিখে রাখার জন্য টেরই পাইনা আমরা কখন শব্দের কাছে আসি সন্ধিক্ষণের কাছে আসি।বুদবুদ মিলিয়ে দেখি আমরা,ব্যথা মিলিয়ে দেখি,মরীয়া হয়ে কালখন্ডের মাঝে দাঁড়িয়ে খুঁজতে থাকি সাদা কাগজের সম্ভাব্যতা।যে মূহূর্তে তিনি বলেন-“ অনেকদিন হলো শেষ হয়ে গেছে /অনুষ্ঠান/এখনও পুড়ছে পোস্টম্যান’, অথবা ‘মানুষের পাশে মানুষ/পাহাড়ের চেয়েও উঁচু’-সে মূহূর্তে আমরা নোনামাটির প্রতিনিধারা ‘বিষাক্ত লেহন’ থেকে লাফিয়ে নামি এক বিশেষ প্রিজমে। সেখানে আলোরা চক দিয়ে লিখছে অন্ধকারের ভাষা কিংবা এক গোছা ‘ব্রাউন ডোয়ার্ফ’ই তার ছড়ানো পরিবার নিয়ে বসে আছে আলোর স্বাভাবিক উপহার হয়ে। দৈনিক দৃশ্যকেই তিনি ধ্রুবগন্তব্য না দিয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট না দিয়ে কিছটা পৌঁছোনোর ধারনা দিয়ে কিছুটা প্রবাসী দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। রোগা রোগা কবিতার মধ্য দিয়ে শ্যামল সিংহ আমাদের নিয়ে চলেছেন কোনো এক বিরাট নীলাভ গুপ্ত আশ্রয়ের দিকে, যেখানে বালির ওপর পাতা রয়েছে আমাদের উদাসীন চুপ অথবা দুর্ধষ নীরব । ১৯৪৯ এ জন্ম হলেও তাঁর প্রথম বই প্রায় চল্লিশ বছর পরে ১৯৯১ এ ‘চাঁদ ও খোঁড়া বেলুনওয়ালা’ ,এবং আশ্চর্যভাবে ষাট বা সত্তরের দশকের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এক কবিতাভাষা নিয়ে শব্দের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ।সাকুল্যে মাত্র তিনটি বই।অথচ মরুবন্দর পেরিয়ে যাওয়ার মত তাঁর মৌনি কবিতারা।সেখানে নিদ্রিতের মত থাকা যায়।কেবল ব্লান্ট স্টাইল অথবা মেদবহুল বন্ধ্যা শব্দ নয় ,পাঁচ ছয় লাইন সীমার মাঝে কেবল মূহুর্তের প্রসাধন মেখে বসে নেই তাঁর চেতনারা বরং ক্রল করে করে উঠে আসছে নিমগ্ন বিস্ময়ের গান্ধার ও ধৈবত নিয়ে,তাঁর কবিতা উপলব্ধির কবিতা,মানসভ্রমনের কবিতা,দ্বিতীয় বিন্দুতে দাঁড়িয়ে প্রথম বিন্দুর পৃষ্ঠটান যেখানে নেই অথচ তরঙ্গের অনুমোদনা আছে,চলে যাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে যাওয়ার এক নতুন আয়তন খুলে আছে।ক্রম থেকে ক্রমিক হয়ে ওঠার অজস্রতা তাঁর শব্দের বিশুদ্ধ অরণ্যে।

প্রতিভার সবসময়ই কোথাও যেন দ্বিতীয় শৈশব থাকে।জীবদ্দশায় যার খোলস ভেঙে দেখার অনুভব পায়না প্রচলিত কবিতাসমাজ যার পোশাক থেকে পরিকচয়পত্র পিছলে যায় আমরা নিশ্চিত সে কবিতা আকাশ গঠন করে পড়ে রয়েছে,সীমা ছাড়িয়ে পড়ে রয়েছে,ভয়াবহভাবে আছড়ে পড়ার মত ভূপৃষ্ঠ আমাদের মত নগন্য জীবিতরা তাকে দিতে পারেনি আর তাই সে জন্মান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।শ্যামল সিংহের মত কবির কবিতার সাথে পরিচয় হওয়া না হওয়াটা পাঠকের সম্পূর্নই ব্যক্তিগত,কিন্তু নিজের হৃদিমের কাছে অপরিচয় থাকাটা! পাঠক খুঁজুক,কবি খুঁজুক,নিজেরই প্রথম খন্ড – সেই তো তার একমাত্র অন্বেষন 

(***কবিতায় ঢোকার আগে অবশ্যই এ সংখ্যায় বিশেষভাবে ঋণস্বীকার রইল কবি সম্পাদক অতনু বন্দোপাধ্যায়ের কাছে,যিনি শ্যামল সিংহের সবকটি কবিতাই নিজের উদ্যোগে অনুলিখিত করে পাঠিয়ে দিয়েছেন।মনে করিয়ে দিয়েছেন এই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে পেতে আসলে আমরা বিচ্ছিন্ন নয়,আত্মীয় সম্পর্কই আমাদের বারবার নিয়ে চলেছে অতীতের আবিষ্কারে। আরও একটা সুখবর-২০১৪ কলকাতা বইমেলাতেই কবি শ্যামল সিংহ নির্বাচিত কবিতা/কবিতা সংগ্রহ প্রকাশ করতে চলেছে ‘এখন বাংলা কবিতা’ ।পাঠকের কাছে এর চেয়ে সুখবর আর কি হতে পারে!নতুন প্রজন্মের কাছে এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর সংযোজনাই বা আর কি হতে পারে)   

গল্পের ছলে

গল্পের ছলে
মেয়েটির চুলের থেকে তুলে নিয়েছি চুলের কাঁটা

পিছে পড়ে আছে সমুদ্র


ফ্যান্টাসি

লোকটি গান গাইছে

আমাকে নিয়ে যা’ আকাশ দ্বীপে
হাতের লাঠি, ময়ূরপঙ্খী হয়ে উড়ে যা’

কথা বলছে কে?
গাছের ওপর ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী
হাতের লাঠি উড়ে গিয়ে পড়লো নদীতে
যুবতীর পেটের ভেতর ডুক্‌রে উঠলো ভোরবেলা

পিঁপড়ের ঘুমে রাত নেই, দিন নেই
আকাশের মূলে পাখি
বাতাসের মূলে পাখি
হাতে তাই ঝুম্‌ঝুমে বৃষ্টি
পায়ে তাই ঝুম্‌ঝুমে বৃষ্টি

ভালোবাসা

জঙ্গল থেকে ফিরে এসেছে
ছেলেটি
মোজার ভেতর জ্বল জ্বল করছে
এক আকাশ তারা

গানের ভেতর ঢুকে পড়ছে চোর
মেয়েটি গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছে
মেয়েটির ঠোঁটে শিস্‌দিচ্ছে জঙ্গল

মাতালের মতো টাল খাচ্ছে রাত


ক্ষয়

অনেক অশ্লীলতার পর
আমি ক্ষমা চেয়েছি গাছের কাছে
শরীরকে ভুল বুঝেছি বারবার
আয়নায় কুয়াশা মোছার পরও
নিজেকে মনে হয় গত জন্মের খুনী
খুন করে করেই আমি সাজাতে চেয়েছিলাম কবিতা

নদী কামড়ে ধরেছে পা
পাতায় পাতায় ভেঙে পড়ছে ঘর-বাড়ি
আমার চোখে ছিল শুধু রবিবার
কুয়ো ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলছে আমার ঘুম

বাক্স

ভেড়ার পালের মতো আজকাল সন্ধ্যা আসে
উপহারহীন সন্ধ্যা গুলি নিয়ে
আমরা ঢুকে পড়ি বাক্সের ভেতরে

আমাদের পাশাপাশি গড়ায় পাথর
দেয়াল ও পেরেকের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলি
কথা বলি উটের ছায়া নিয়ে

সারা শরীরে ঝম্‌ঝম্‌বৃষ্টি নিয়ে
যুবতীরা চলে আসে আমাদের গল্পে

ডালপালা মেলে নাচতে থাকে বাক্স
নাচতে নাচতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে


জ্বলন্ত
আমার জুতোর ফিতে খুলে দিল সে
ছড়িয়ে পড়লো জ্বলন্ত রাত
মাটি খুঁড়ে আমি দেখছি
মাটির গভীরে কত জল
আমি যেতে চাই ফলের সর্বাত্মক ধ্বংসে
লোমের ফাঁকে ফাঁকে জিরাফ

ব্লটিং-পেপার
ব্যাঙ ডাকছে।      বৃষ্টি পড়ছে
যুবতীর পেটের ভেতরে বসে
আমি শুষে নিচ্ছি ব্লটিং-পেপারের দুঃস্বপ্ন গুলি

ভাঙা
যে কোনো কথাবার্তায় চলে আসে থম্‌থমে কুয়ো
উলটো করে জামা পরার মতো সব কিছু মনে হয়
মন খারাপ হলে লাট্টুর মতো পাক খেতে খেতে
ফিরে আসে ফাঁকা মাঠ
ঘরের মধ্যে জ্বলছে ধূ-ধূ রেলস্টেশন
চিরুনির শেষে ভেঙে যাচ্ছে গ্রাম

লাল অক্ষর
মনে পড়ছে লাল সোয়েটার
সোয়েটারের শরীর জুড়ে ছিল
একটি মেয়ের অজস্র লাল চুমু
সোয়েটার উড়তে উড়তে পার হয়ে গেছে
নদী নালা পাহাড় পর্বত
হু হু করে শীত বাড়ছে
ভাঙা দাঁতের মতো পড়ে আছে লাল অক্ষর

ছাতা
গর্ভবতী নারীর মতো আর আসেনা সময়
ফাঁকা ঘরের গুনগুন আওয়াজে আমি আছি
আছি টেবিল চেয়ারের কান্নায়
আয়নায় মেঘের গম্ভীর চলাফেরায়
কেঁপে ওঠে ঘরবাড়ি
শেখা হল না পাতার সারাংশ
চারিদিক থেকে ছুটে আসছে স্তম্ভ ছাতা

নিমন্ত্রন
গায়ে গায়ে শীত নিয়ে রেখে এসেছি পাহাড়ে
কথার ভেতর উঁকি দিচ্ছে বন
ঘোড়ার তলায় ঘুমিয়ে পড়েছে রাত
সূর্যের সাথে উঠে আসছে সেলুন
শিশুটি ওড়াচ্ছে বেলুন

স্বাধীনতা দিবস

মেয়েটির চোখে খেলা করে
               জাহাজের গল্প

খুনির অহংকার নিয়ে
ছেলেটি লিখছে নিমন্ত্রণ-চিঠি

আজ পাখির জন্মদিন
আজ আকাশ-ভর্তি জামার গল্প

আজ স্বাধীনতা দিবস
মুর্গির পেটের ঘুমে

মুর্গির পেটের ভিতর প্রচুর ঘুম
এই ঘুম খেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি
অনেকদিন

একজন প্রাচীন মানুষের কাছ থেকে জেনেছি
ভারতবর্ষের প্রথম কোন্‌নারীর
                               পেট থেকে
জন্মেছিল মুর্গির প্রথম ঘুম

মাঝে মাঝে ট্রাক-ভর্তি মুর্গি নিয়ে
                   সীমান্তে চলে যায় মিলিটারি
মুর্গির পেটের ঘুমে সাদা পাতা ক্রমশ
                             হয়ে ওঠে রক্তাক্ত

শূন্য থেকে শুরু

শূন্য থেকে শুরু করলে
প্রজাপতি ধরা যায়
শূন্য থেকে শুরু করলে
চাঁদের অনুবাদ করা যায়

নইলে প্রচ্ছদহীন হয়ে পড়ে বই


শাঁখা

সূর্য-পাগলের সাথে
চাঁদ-পাগলের দেখা হলে
বৃষ্টি পড়ে

সাক্ষী সব পাখি
নদী
সূর্য-পাগলের চোখে কী খোঁজে
নদী
চাঁদ-পাগলের চোখে কী খোঁজে

অরণ্যে অরণ্যে ছড়িয়ে আছে শাঁখা

স্তব্ধতা

ছাড়া পেয়েছে সব পিঁপড়ে
নিশ্চুপ আঙুলে আংটি

সুতো থেকে
একদিন জন্ম নিয়েছিল গান

সব কিছু ভুলে
আমরা পরিষ্কার করছি বাগান

পোড়োবাড়ি

কানের পাশে মেঘ ডাকছে
লবনের কাছে ঋণী আছি

মনে পড়ছে
স্লেটের দুপারে আত্মীয়স্বজনের কথা
মাথায় টুপি পড়ে
একজন লোক এগিয়ে আসছে
                     আমার দিকে

লোকটির পা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে
পোড়োবাড়ির গন্ধ


পালক

যে মেয়েটি বারবার ফুলের বাগানে যায়
আমরা তার চরিত্র সম্বন্ধে সন্দেহহীন

আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি
এক ঝাঁক সাদা হাঁস তাদের পালক
                  উপহার দিয়ে গেছে
                           মেয়েটিকে

বছরে একবারই সরস্বতী পূজা হয়

শহর

কানে কানে ফিসফিস করে পাতা

‘ আমি ভাল আছি         তুমি ?’

মাংস গড়িয়ে রাত নামে
সম্পর্কে টান পড়ে

প্রচুর মদে দোলে হরিণের ছায়া

এভাবেই সে আটকে রাখে শহর
এভাবেই সে আটকে রাখে শহর

বিবাহবার্ষিকী

মেঘ যুবকে ছুঁয়েই
             ছুঁয়েছিল যুবতীকে

প্রতি বছর যুবক – যুবতী মেঘ পূজা করে
পূজার রাত চলে যায় হাঁসেদের দখলে

সারারাত প্রদীপের মতো অজস্র হাঁস
ভেসে যায়
দূর থেকে দূরে

যুবকের কোমরের বেল্টে টোকা দেয় যুবতী
বেল্ট থেকে পাতা পড়ে
এভাবেই শুরু হয় বিবাহবার্ষিকী

আলপিন

লেখো পায়রা আকাশের ---- ভূত
লেখো পায়রা আকাশের ---- দূত

জ্বর হলে
কেন মনে পড়ে ভাস্কো – ডা – গামার কথা ?

আলপিন গুলো ফেলে দিয়ে
আমি ফিরে আসি দেশে


জাহাজ

তোমার চুল থেকে রক্ত পড়ছে
গন্ধে টের পাই জুঁই

কেবল মনে হয় শুয়ে থাকি
সম্প্রতি একটা ঘর নিয়েছি ভাড়া

ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছি জাহাজ


টমেটো

টেবিলের ওপর জ্বলজ্বল করছে টমেটো
তুমি কি বিবাহিত ?


টেবিলের ওপর জ্বলজ্বল করছে টমেটো
তুমি কি বিবাহিত ?
                 
চাঁদ পোড়ালো কে

একলা মাঝি
জলের ফাঁকি
ছিল তাঁর নল ছিল
লাল রঙের বল ছিল
হুলুস্থুল বনস্থালী

চাঁদ পোড়ালো কে ?
চাঁদ পোড়ালো কে ?





মানুষের পাশে

কয়েকটি সকাল সেলাই করলে
হাঁস
কয়েকটি দুপুর সেলাই করলে
জিরাফ
কয়েকটি রাত সেলাই করলে
নদী

মানুষের পাশে মানুষ
পাহাড়ের চেয়েও উঁচু

শুধু কান্নাটুকু

শুধু কান্নাটুকু রেখো
বাকি সব পাকতে দাও

কেউ কেউ বৃষ্টি নিয়ে
প্রতিদিন বাড়ি ফেরে

সেতুর কথায় ফিরে আসি
সেতুর তলায় মেঘের মতো জমা আছে
                                ঘুম

শুধু কান্নাটুকু রেখো
বাকি সব পাকতে দাও

উলুধবনি

তুমি বললে
হেঁটে যায় উট

তারা ভাগ করছে জল

উলুধ্বনি চেপে
বয়ে যাচ্ছে বাতাস



ফুলগুলি সব

ফুলগুলি সব
তোমার কাছে যাবে বলে
                   চুল বেঁধেছে    

ফুলগুলি সব
তোমার কাছে যাবে বলে
                   ঘর ভেঙেছে

তীরগুলি সব দাঁড়িয়ে আছে নতমুখে
ফুলগুলি সব
তোমার কাছে যাবে বলে

পোস্টম্যান

সে ফিরিয়ে দিয়েছে জাহাজ
আঙুলে গজিয়ে উঠছে ঘাস

অনেকদিন হলো শেষ হয়ে গেছে
                        অনুষ্ঠান

এখনও পুড়ছে পোস্টম্যান

হাতি

চুমুতে চুমুতে পৃষ্ঠা শেষ
আর – একটি হাতি রাখলাম
তোমার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে

মায়ের শেষ ইচ্ছার আলো জ্বলছে




লন্ঠন

লন্ঠনের আলো থেকে
       তুমি বিদায় নিয়েছ

পালকি যাচ্ছে পালকি

আলো ও অন্ধকারে
       পড়ে আছে টিকিট
                      
বন্দর

তোমার ও আমার ভিতরে নেই
কোনো বাস ও ট্রাম

চুপ করে থাকলে
পড়ে জাম
জমে ওঠে নেশা

কুসিত হওয়ার আগেই
ছেড়ে যাই বন্দর

পাথরের কথা

নামতে
       নামতে
               নামতে
                              কুয়ো

জানতে
        জানতে
                 জানতে
                               গাছ
ঘর – সংসার নেই

কেন পাথরের কথা মনে পড়ে
কেন পাথরের কথা মনে পড়ে

সর্গপত্র

সারাদিন যীশুখৃষ্ট
পায়ের তলায় দুঃখ বাড়ছে

তলোয়ার খুলে দিচ্ছে মঞ্চ
আগুন শান্ত হয়ে বসে আছে
মঞ্চ জুড়ে হাওয়া নাচছে

আজ কয়েকটি ফুলের নামকরণ হলো

আজ শ্মশান - এর উদ্দেশ্যে লেখা হচ্ছে
                           সর্গপত্র


               


(চিত্রসৌজন্য : অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় )