(কাব্যগ্রন্থ- ‘এখানে আমি, ‘শব্দ
শব্দ ’, ‘কলিকাতা
সমাচার )
The
scene which the light brings before our eyes is inexpressively great, but out
seeing has not been as great as the scene presented to us; we have not fully
seen ! We have seen mere happenings, but not the deeper truth which is
measureless joy”- Rabindranath
রবীন্দ্রনাথের
বক্তব্যটিকে তুলে ধরার কারন, যে কবিকে নিয়ে আমরা রসায়নে নামছি, তিনি শব্দের
মাঝখানে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিয়েছেন সবকটি মোমবাতি আর এবার খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই শেষের
বাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়া ঘুমপাড়ানি জ্যোৎস্না। তিনি
আসলে কবিতা লিখতে চাননি,বরং তার কবিতারা কানকে পেরিয়ে পৌঁছে গেছে চোখের সাধনায় আর
তার চোখ শিখে গেছে শব্দ ধরার কায়দা দেখার কায়দা, শব্দকে ব্যবচ্ছেদ করার পক্ষপাতী
হয়েছেন নিছক একটি দৃশ্যের ধৃষ্টতায়। হ্যাঁ, ভিস্যুয়াল পোয়েট্রি,প্রুনিং পোয়েট্রি,
বহমান ভাষ্যের এক অনুপম দৃশ্য, এমনই এক বহুমাত্রিক কার্নিভালের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গথিক
আলোকুমার- পুষ্কর দাশগুপ্ত ...
সরাসরি চলে
যাওয়া যাক ষাটের দশকে।সমাজ রাষ্ট্র সাহিত্যে সাম্পান উড়িয়ে চলেছে বিরোধিতা ।অভ্যাসে
ব্যবহারে প্রথার শাসণ ভেঙে গড়ে উঠছে অনন্য
ও প্রচলমুক্ত এক বাক রীতি। তা মহৎ ভাবনার থেকে পুনর্মুদিত নয় বরং
স্বাভাবিক স্পন্দনের ভিত্তিতে পরিশীলিত। ষাটের দশক যখন পরিবর্তণ চাইছে আধুনিক
কবিতার আধুনিক সাহিত্যের ক্লান্তিকর একঘেয়েমির জীর্ণতার সমাপ্তি খুঁজছে, গল্প ও
কাহিনীর মূকাভিনয় থেকে মুক্তি খুঁজছে , শেষ পঞ্চাশ এবং প্রায় সমগ্র ষাটের
দশকব্যাপী পরিমাণমত প্রেম বিষাদের দার্শনিকতা সহযোগে গড়ে ওঠা বাংলা সাহিত্যের
কাব্যরুচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তখণই
প্রাতিষ্ঠানিক আধারকে আড়াআড়ি চেরাই করতে একে একে দেখা গেল হাংরী,থার্ড লিটেরেচার,শাস্ত্রবিরোধী
, নিম সাহিত্য বা শ্রুতির মত ইস্তেহার ভিত্তিক আন্দোলণগুলো,দেখা গেল আকন্ঠ হেজে
মজে যাওয়া বিবৃতধর্মী বাংলা কবিতার ফেনার মাথায় হাংরি,শ্রুতি বা শাস্ত্রবিরোধীর মত
কয়েকটা কচুরিপানা নাচতে নাচতে যাচ্ছে, তাদের লক্ষ কাছেই কোনো ধ্বংসস্তুপের অধিকার
নেওয়া,একা একা অন্ধকারে বসে থাকা শব্দকে স্রোতের টানে বয়সের ঢালে ভাসিয়ে নিয়ে
যাওয়ার সাহস দেখানো।প্রথাগত বাংলা সাহিত্যের সবুজ কৌমার্যকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া,কবিতাকে
আঘাত নয় বরং অব্যক্ত করা, কবিতার শরীর থেকে অসংলগ্ন করা এক নতুন সাংকেতিক ভাষা।কিন্তু,
পুষ্কর প্রসঙ্গে শ্রুতি নিয়ে এত কথা কেন! কারণ শ্রুতি আন্দোলনের আদর্শ ও বিশ্বাসের
মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠা পুষ্করের ধূসর সংগীত, একজন কবিতাকারক থেকে একজন ছবিতাকারকের
ভ্রমনের ফলকটুকু ভেসে থাকে শ্রুতিরই গুন ও বিয়োগে। কবিতার চিরাচরিত মোহের পথ ত্যাগ
করে নতুন পথ আবিষ্কারের প্রয়াসী হওয়া পুষ্করকে আমরা পাই শ্রুতি আন্দোলনের ঝুরো
সমুদ্রে, যেখানে বিষয়ের কষ পেরিয়ে আঙ্গিকের কথকতার এক সুস্থির সমীকরন যেখানে গায়ে
গা লাগিয়ে বসে আছে শব্দ-রং-দৃশ্য, যেখানে কবিতার কুঁজ পেরিয়ে পেরিয়ে ভেসে উঠছে
গল্পের কিউসেক। ফরাসী সাহিত্যের একজন বিশিষ্টজন অপেক্ষা শ্রুতির প্রবক্তা নেতাতেই
বোধহয় পুষ্করের বন্ধনমুক্তির নিশ্চিত প্রত্যয়; খোঁড়া প্রতিবন্ধী ভাষা ভেঙে
ব্যক্তিগত উচ্চারনের স্বতন্ত্র ছন্দস্পণনের সৃষ্টি যে তাঁর শ্রুতিকে ঘিরেই ।প্রকাশ
নিরপেক্ষ কবিতার কথা পুষ্কর ভাবেননি বরং তিনি অব্যক্তকে সংকেতিত করতে চেয়েছেন,
তাঁর যাত্রাও গভীরতার দিকে। আর এই অজ্ঞাতের আবিষ্কারেই জীর্ন আঙ্গিককে পরিত্যক্ত
ব্যথার আদল দিয়েছেন পুষ্কর,প্রকারন্তরে রিলিফে তুলে নিয়েছেন নতুন মুদ্রনবিন্যাস
,লিপির অনুবাদে লিপ খুঁজেছে কিছু ইমেজারী এক্সপ্রেশন, কিছু ভিস্যুয়াল কমিউনিকেশন।বিশেষ
ধরনের দৃষ্টিগ্রাহ্যতার মাধ্যমে জটিল আত্মিক অভিজ্ঞতা প্রকাশের অকর্ষিত ভূমিটিকে
বারবার খনন করেছেন পুষ্কর, খুঁটে খুঁটে তুলে এনেছেন শব্দের নিচের কোনো দরজার ছবি,
কোনো দীর্ঘসূত্রতার চৈতন্য; তিনটি মাত্র কবিতার বই আর অসংকলিত কবিতা থেকেই বোঝা
যায় কবিতার অস্থিমজ্জার জৈবসারে প্রথাগত গুলমোহর বা পাতাবাহার বসাতে আসেননি পুষ্কর
বরং তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন একান্তই নিজের কল্লোল রঙ্গন, ঝলমল মঞ্জিল,হ্যাঁ,
শব্দের দ্রাঘিমা ভাঙা এই কবির চারপাশে ঘোরাফেরা করছে খোসা ছাড়ানো অগুনতি শব্দ, আরও
একটি কবিতার জন্য তাদেরকেই তুলে আনছেন পুষ্কর, লাইটপোস্টে হেলান দিয়ে রাখছেন,
বাসস্টপের ছাউনির তলায় চোখ ও দূরবীন দিয়ে রাখছেন, রাখছেন বাস্তবের যা কিছু ক্লেদ
পরিশ্রুত হয়ে মিলিয়ে যায় তেমনিই এক স্বপ্নের দিগন্ত সীমায়। আসলে শব্দের বা বোধের
স্বীকৃতি অপেক্ষা পুষ্কর পেতে চেয়েছেন দৃশ্যের সানিমাপাধা ,পেতে চেয়েছেন
মানুষগুলোর বাইরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক মুখ নামের শব্দগুলো, মননের একাধিক কম্পনগুলো। তাঁর ভাষাবিশ্বে বারবার
নিরীক্ষনের প্রয়াস, বারবার পৌঁছে যাওয়া অলৌকিকতার রহস্যে,শব্দমধ্যবর্তী আলোর
রেখাগুলো ধ্বনিগুলো ছায়াগুলো কথার টুকরোগুলো সেখানে টূকরো টুকরো হয়ে মিশে যাচ্ছে
আর চারপাশের ছায়াগুলো অস্থির হয়ে ভ্রমণ করছে গাঢ় ছায়ার চৌরাহে। আর দর্শন স্পর্শন
শ্রবন এই সবটুকু নিয়েই কবিতার সনাতনী চিলেকোঠা নাড়ানো পুষ্করের,সব টুকু নিয়েই ‘চিঠি
লেখা শব্দের প্রিয় খুঁজে খুঁজে’ ...
রেস্তোরাঁয়
১ ২
৩ ৪ ৫
ডানদিকের
সারিতে ৫ টি
১ ২
৩ ৪
বাঁদিকে ৪
টি
পরপর টেবিল
৯ টি
চৌকোণা
টেবিলের
৩টির কাচ
নীল
৩টির কালো
৩টির সবুজ
প্রতিটি
টেবিলে ৪টি করে
মোট ৩৬ টি
চেয়ার
৩ টি টেবিলে
৪ জন করে ১২ জন
৩ টি টেবিলে
৩ জন করে ৯ জন
২ টি টেবিলে
২ জন করে ৪ জন
মোট ২৫ জন
লোক
বাকি ১ টি
টেবিল ফাঁকা
টেবিলে
কেউ কথা
বলছে কেউ বলছে না
কেউ জল
খাচ্ছে কেউ খাচ্ছে না
কেউ চা
খাচ্ছে কেউ খাবার খাচ্ছে
আবার
কেউ কিছুই
খাচ্ছে না কিছুই করছে না
ঘরে
৯ টি টেবিল
টেবিলে
৩৬ টি চেয়ার
চেয়ারে
২৫ জন লোক
তাদের জন্য
৩ জন ওয়েটার
ওদের মাথার
ওপর
৫ টি ফ্যান
ঘুরছে
ওদের মাথার
ওপর
৬ টি আলো
জ্বলছে
ওদের মাথার
ওপর
৫ টি কড়ি ৯
টি বরগা নিয়ে ছাদ স্থির হয়ে আছে
শব্দ শব্দ
প্রথমে
১
তারপর
২
তারপর
৩
তারপর
অসংখ্য পায়ের শব্দ
প্রথমে
১
তারপর
২
তারপর
৩
তারপর
অসংখ্য গলার শব্দ
প্রথমে
১
তারপর
২
তারপর
৩
তারপর
অসংখ্য কড়ানাড়ার শব্দ
শব্দ
১
শব্দ
২
শব্দ
৩
শব্দ
শব্দ শব্দ
একটু ঝুঁকে
একটু
ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দেশলাই সিগারেটের প্যাকেট আর মানিব্যাগটা
তুলে
নিয়ে কোনরকমে আড়মোড়া ভেঙে উঠে জুতোজোড়া পায়ে গলিয়ে
প্রথমে
ডান তারপর বাঁ পা
তুলে
এগিয়ে
ঘর থেকে দরজা
দরজা খুলে বারান্দা
বারান্দা ধরে সিঁড়ি
সিঁড়ি বেয়ে নেমে
আরো একটা দরজা
খুলে গলি
গলি ধরে
প্রথমে
সিধে
তারপর ডাইনে
তারপর
আবার বাঁয়ে
মোড় ঘুরে
বড়রাস্তা
ফুটপাথ
ফুটপাথ থেকে
চারিদিকে তাকিয়ে
রাস্তা পেরিয়ে
সোজা
উত্তরে
ঘুরে পশ্চিমে
আবার ঘুরে
অথচ
ঝুঁকে হাত বাড়াতে বাড়িয়ে কিছু তুলে নিতে নিয়ে উঠে দাঁড়াতে
দাঁড়িয়ে
জুতোজোড়া পায়ে গলাতে গলিয়ে এগিয়ে যেতে
এগিয়ে
দরজা খুলতে ইচ্ছে করে না করে
না তাই
বাসে
এক
দুই তিন চার চারটে লাইটপোস্ট দুপুরের রোদ হলুদ শাড়ি
নীল
সবুজ তিনটি মেয়ে অ্যামবাসাডর সাদা ফিআট
কালো
ট্যাকসি
একটা বুড়ো লাল ডবলডেকার দেয়ালে লাল ত্রিকোণ
বাঙালী
গর্জে ওঠো যুক্তফ্রণ্টকে সমর্থন করুন জোড়াবলদে
ছাপ
দিন বন্দুকের নল থেকে মুক্তঅঙ্গনে রোববার DENA
BANK লক্ষীর ছবি Bata ঘুরতেই ট্রামলাইন Amritayan
গ্রন্থভারত
তিনটি ছেলে চারটি মেয়ে বুড়োবুড়ি একটা কুকুর
খাট
আলমারি পেচ্ছাবখানা পার্ক ট্রামডিপো GANESH
KATARA গনেশ কাটারা LAKSHMI KATARA লক্ষী
কাটারা
লাল শাড়ি ছোটপরিবার সুখী পরিবার
টিকিট
টেবিলে
টেবিলে
একটা
ভাঙা গ্লাস
একটা
ছাইদান
ছাই
টেবিলে
একটা
কলম
দোয়াত
কালি
টেবিলে
একটা
বই
খাতা
পেনসিল
টেবিল
টেবিলে
সারারাত
সারাদিন
একটা
কুকুর সারারাত ধরে ডাকে
একটা
বাতি সারারাত ধরে জ্বলে
একটা
মানুষ সারারাত জেগে থাকে
সারারাত
সারাদিন
কুকুরটা ডাকে না
সারাদিন
বাতিটা নেভানো থাকে
সারাদিন
লোকটা পথে পথে ঘোরে
সারাদিন
তারপর
আবার
রাত সারারাত
তারপর
আবার
দিন সারাদিন
দিন রাত
রাত দিন
সারারাত সারাদিন
কে
কেন কোথায়
কে
কেন কোথায় কী কখন কোনদিকে কবে কেমণকরে
তাহলে
শব্দ
চিৎকারের ভেতর
অগুনিত
মানুষ ছুটছে
ছুটছে
ট্রাম উঠছে বাসে উঠছে ট্রেনে উঠছে নামছে লাফাচ্ছে হাঁটছে
ছুটতে
নামছে উঠছে হাঁফাচ্ছে হাঁটছে নামছে ছুটছে হাঁফাচ্ছে উঠছে
হাতপা
ছুঁড়ছে হাঁটছে ছুটছে হাঁপাচ্ছে উঠছে নামছে ছুটছে ছুটছে ছুটছে
মাঝে
মাঝে চিৎকার
বাড়িঘর
অফিস আদালত দোকানপাট হোটেলরেস্তোরাঁ হাটবাজার
ভাঁটিখানা
রাস্তাঘাট ফুটপাথ পার্ক গাড়িঘোড়া ট্রামবাস লোকে গিজগিজ
লোকলোকলোকলোকলোকলোকলোক
মেয়েমদ্দ ছেলেবুড়ো
কথা
বলছে হাসছে কাঁদছে ঘামছে ঘাম মুছছে বসে আছে শুয়ে আছে
দাঁড়িয়ে
আছে বই পড়ছে প্রেম করছে তর্ক করছে মারামারি করছে
কাজ
করছে বাজার করছে খাচ্ছে ঘুমোচ্ছে সংগম করছে
বিয়োচ্ছে
বিড়ি ফুঁকছে পান খাচ্ছে তাস খেলছে মাল টানছে
কিনছে
বেচছে দরাদরি করছে বক্তৃতা দিচ্ছে চেঁচাচ্ছে বেঁচে আচে মরে যাচ্ছে
আর
মাঝে মাঝে চিৎকার
কে
কেন কোথায় কী কখন কোনদিকে কবে কেমণকরে তাহলে
এই
ঘর
এই
ঘর তার চারদিকে সাদা দেয়াল সাদা দেয়াল তার
চারদিকে চারদিকে তার
সাদা
দেয়াল সাদা দেয়াল চারদিকে দেয়াল তার চারদিকে চারদিকে সাদা
চারদিকে
দেয়ালদেয়ালদেয়ালদেয়াল
এই
ঘর তার কালো মেঝে তার মেঝে কালো কালো মেঝে মেঝে কালো তার
মেঝে
কালোকালোকালোকালো
এই
ঘর তার ওপরে কড়িবরগা ছাদ ছাদ কড়িবরগা তার ওপরে ওপরে তার বরগা
কড়ি
ছাদ তার ওপরে ছাদকড়িবরগাকড়িছাদকড়িবরগাছাদ
এই
ঘরে ঘরে ১ টা বাতি ১ টা বাতি ঘরে ১ টা বাতি জ্বলছে ঘরে ১ টা বাতি ঘরে
বাতি
১ টা ১ টা ১ টা ১ টা বাতি ঘরে জ্বলছে
এই
ঘর তার ১ টা দরজা ১ টাআ জানলা তার ১ টা দরজা বন্ধ তার ১ টা জানলা
বন্ধ
তার দরজা তার জানলা ১টা দরজা ১টা জানলা বন্ধ তার
দরজাজানলাবন্ধবন্ধবন্ধ
এই
ঘর ঘরে ১ টা খাট ১ টা টেবিল ১ টা চেয়ার চেয়ার ১ টা টেবিল ১ টা খাট ১ টা
টেবিলচেয়ারখাটখাটটেবিলচেয়ারচেয়ারটেবিলখাট
১ টা ১ টা ১ টা
এই
ঘর তার চারদিকে সাদা দেয়াল কালো মেঝে ওপরে কড়িবরগাছাদ
ঘরে
১ টা বাতি ১ টা দরজা ১ টা জানলা ১ টা খাট ১ টা টেবিল ১ টা চেয়ার
তার
– যা আমার বা তোমারও-জীবনকাহিনি
একদিন
তার জন্ম হল
তারপর
থেকে সে
বাঁচার প্রানপ্রণ চেষ্টা করতে লাগল
শৈশব থেকে কৈশোর
কৈশোর
থেকে যৌবন
যৌবন থেকে প্রৌঢ় বয়স অব্ধি
বাঁচার চেষ্টায় প্রতিমূর্হুতে অসহায়
বোধ
করি চাকরির তদ্বির তদারকে মান ইজ্জত খুইয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রায়
গলাধাক্কা
খেয়ে রেশনে লাইণ দিয়ে কেরোসিনের লাইনে কয়েক ঘন্টা করে দাঁড়িয়ে
কালোবাজারে
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে হয়রান হয়ে হাসপাতালে ভর্তির জন্য মাথা কুটে নেতাদের
হাতে পায়ে ধরে ট্রামে-বাসে-ট্রেনে জানোয়ারের মত যাতায়াত করে
বাঁচার
চেষ্টা করতে
করতে
বাঁচার চেষ্টা করতে করতে বাঁচার চেষ্টা করতে করতে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠল
তবু
বাঁচতে
চেয়ে
মাথাগোঁজার
আস্তানা খুঁজে সেলামি আর বেশি ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালার তাড়া খেয়ে ছেলেমেয়েকে
স্কুলে ভর্তির জন্য সবার কাছে হাত কচলে মেয়ের বিয়ের দাবী মেটাতে ধারদেনা করে ফতুর
হয়ে ছেলের চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হবে বলে কাবুলির কাছে ধার নিয়ে পাড়ার মাস্তানদের
অপমান নীরবে হজম করে পূজোর চাঁদা দিতে নাজেহাল হয়ে লোডশেডিঙে সি এম ডি এ র গর্ত
করা রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে বাড়ি ফিরে এক হাজার মশার কামড় খেয়ে
বাঁচার চেষ্টা করতে করতে
বাঁচার চেষ্টা করতে
করতে
বাঁচার
প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে
করতে
গলদঘর্ম হয়ে অবশেষে একদিন সে মারা গেল
গড়ে
ওঠা
ধরা
যাক
ভাঙা
ভেঙে যাওয়া
ভেঙে
যাওয়াটা একটা ঘটনা
ভাঙা
হল বিশেষ একটা মূর্হুতে দুটো কিংবা তারো বেশি টূকরোয়
আলাদা
হওয়া
অর্থাৎ
কিনা ছড়ানো ছড়িয়ে পড়া ছড়িয়ে যাওয়া
যেমণ
ধরা যাক শব্দ
যেমণ
একটা শব্দ
শব্দটা
ধরা যাক আমি
ভেঙে
টুকরো টুকরো হয়ে যায়
আ মি
আ ম ই
যদি
ছড়িয়ে পড়ে
টুকরো
টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে যায়
আ ম
ই
ম ই
আ
ই আ
ম
তারপর ই
উত্তরে চলে গেল
ম দক্ষিনে
আ পূর্বে কিংবা পশ্চিমে
ঈশান
কি নৈঋতেও হতে পারে
তখন
আবার জোড়া লাগাতে হবে
জোড়া
দেওয়াটা একটা কাজ
এক
জায়গায় জড়ো করা
ইমআ
তারপর
তারপর
সাজানো
ই
আ ম হোল না
ম
আ ই হোল না
আ
ম ই এবার ঠিক আছে
এবার
জোড়া লাগাত হবে
জোড়া
লাগানো হল
আবার
তৈরি হল
গড়ে উঠল
আমই
আমি
ফিরে
আসি
স্ফটিকের
দীপ্ত বুকে
বিচ্ছুরিত বর্ণমালা সাতটি রঙের
সন্ধ্যার
গৈরিক কিছু লেগে আচে মিনারে চূড়ায়
বুঝি
ঐ ফুলগুলি
লাবন্যের
মায়াবী গোলাপগুলি বুঝি
ঐ
বর্ণমালা
ঐ আলোকিত প্রস্রবণ বুঝি
ডেকেছিল
আমি
যাবো
আমার স্বপ্নেরা তবে
পালতোলা নৌকার
শরীরে
আবার
আবার ভাসো সায়াহ্নের ণদীতে চঞ্চল
তবু
কেন ফিরে আসি ফিরে
দুহাতের
অঞ্জলিতে বুকের গোপণ রক্ত নিয়ে
দেখি সব বিবর্ণ
মলিন
এবং
এখানে ঐ
পিঙ্গল কফিনগুলি অস্পষ্ট
কাদের
বারবার
ফিরে আসি
ফিরে আসি স্বগত ছায়ায়
এই
শহর
এই
শহর তাডিল
চারদিক থেকে জড়িয়ে ফেলে
গলায়
হাত ছোঁয়াতেই
হঠাৎ সে চমকে
উঠে
যে করেই হোক এখান থেকে
পালাবে
ভেবে
চারদিক তাকিয়ে
সামনে
ট্রাম বাস অগুণতি মানুষ কোলকাতা
পেছনে
ট্রাম বাস অগুণতি মানুষ কোলকাতা
ডাইনে
ট্রাম বাস অগুণতি মানুষ কোলকাতা
বাঁয়ে
ট্রাম বাস অগুণতি মানুষ কোলকাতা
দেখতে দেখতে
চারিদিকের
কোলকাতা
কোলকাতা কোলকাতা এই তুমুল চিৎকারে
কোলকাতা
কোলকাতা কোলকাতা এই ভীষণ আতঙ্কে
কোলকাতা
কোলকাতা কোলকাতা এই নিবিড় ক্লান্তিতে
কখন সব ভুলে গিয়ে
কেমন
আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে
এই শহর
ট্রাম বাস আর অজস্র মানুষের
ভীড়ে
অসংখ্য
অলিগলি আর রাস্তার
অন্ধ জটিলতা পার করে এনে
তাকে
তার
তালগোল পাকানো নির্বোধ শরীরটাক
চৌরঙ্গীর একটা উজ্জ্বল লাল আলোর
দিকে
ছুঁড়ে দিল
আমায়
দেখে
ওরা
পারে
ওরা
থাকতে পারে
ওরা
হেসে থাকতে পারে
ওরা
হাসলেও হেসে থাকতে পারে
ওরা
আমায় দেখে হাসলেও হেসে থাকতে পারে
আমায়
দেখে ওরা সবাই হাসলেও হেসে থাকতে পারে
কিংবা
হয়ত
ছিল
উঠেছিল
হেসে
উঠেছিল
হো
হো করে হেসে উঠেছিল
সবাই
হো হো করে হেসে উঠেছিল
ওরা
সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিল
আমায়
দেখে ওরা সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিল
এই
এই
শহর
এই
বাড়ি
এই
রাস্তা
এই
দিন
এই
ট্রাম
এই
বাস
এই
কাজ
এই
সন্ধ্যা
এই
লোকজন
এই
আড্ডা
এই
বন্ধুরা
এই
দিন
এই
রাত
এই
বেঁচে থাকা
পতাকা
ফেস্টূন পোস্টার
মাথামুখশরীরশার্টপাঞ্জাবিগেঞ্জিব্লাউজশাড়িধুতিপ্যান্টলুঙ্গিপায়জামা
যাচ্ছে
পরপর হাত
দিতে
হবে মানতে হবে হো হুঁশিয়ার হ্যায় তৈয়ার
চিনে
নিন কবর দিন মানতে হবে বন্ধ হবে
ই ন
কি লা ব জিন্দাবাদ
এগিয়ে
যাচ্ছে পাশাপাশি পরপর সামনে পেছনে
অসংখ্য
মানুষ
আলোটা
জ্বলছে
আলোটা
জ্বলছে
একটা
হাত এলিয়ে আচে
মাথাটা
ঝুঁকে
একটা
মানুষ
আলোটা
জ্বলছে
ঘড়ির
টিকটিক
একটা
হাতের
একটা
মাথার
একটা
মানুষের ছায়া মেঝে
আলোটা
জ্বলছে
সাদা
দেয়াল
নিঃশ্বাসের
শব্দ
বারান্দায়
জুতোর আওয়াজ
মেঝে
ছায়া
আলোটা
জ্বলছে
আলোটা
জ্বলছে
আলোটা
জ্বলছে
এই
যেমন
এই
যেমন অ আ
ই ঈ
অথবা
ক খ
গ ঘ ঙ
ধরা
যাক অ ক অ ক
কবিতা কলকাতা কখন
নয়তা
আ
ক
আ কা কাক কা
কা কাকা কা
আ
আমি
বা ই
ক ই কি কিংবা
কিন্তু তু মি
তুমি
আমি কিংবা তুমি
আমি আ
মি মি আ
মিয়া মিয়াকিমল্লার লার আর
আর তুমি
তবে
আমি আর তুমি
আবার
আমি মি তুমি
মি ই
ই
ঈ ঈগল গল গলা
কার
তার তার গলা
তখন
হঠাৎ সে
সে
তাহলে আমি তুমি ও সে
ও
আমার দেশের মাটি
আস্ত
একটা জানোয়ার বনে গেছি
ধুঁকছি
আদিম
এই দেশ
এই
শহর
নিষ্প্রদীপ
জঙ্গল
ছোট
বড় মাঝারি জানোয়ারদের দাপাদাপি
আর্তনাদ
আর হুঙ্কার হো হো সত্যমেব জয়তে
অন্ধকারে
ঝাঁকে
ঝাঁকে খুদে জানোয়ারের পাশাপাশি
বুকে
হাঁটছি এই টিকে থাকা
বাঁকানো
নখ আর শিকারী দাঁতের ঝলকে বারবার কেঁপে উঠছি
প্রাণ
বাঁচানোর উপায় খুঁজছি
বুকফাটা
চিৎকার
আর গর্জন হা হা অহিংসা পরমো ধর্ম
মূহুর্তে
হিংস্র
আক্রমন লাফিয়ে পড়বে
টুকরো
টুকরো করে দেবে
আমার
মতো আরো সব বুকে হাঁটা জানোয়াররা
হাঁপাচ্ছে
কাৎরাচ্ছে
এই
বেঁচে থাকা
দীর্ঘশ্বাস
আর
আস্ফালন হো হো গনতন্ত্র জিন্দাবাদ
হা
হা সমাজতন্ত্র বেড়ে মজা
হি হি ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা
মৃত
কুকুরেরা
মৃত
কুকুরেরা সব
সাদা
কালো ধূসর খয়েরী
মৃত
কুকুরেরা সব স্তুপাকার অসংখ্য
তাদের
হাঁকরা
চোয়াল দাঁতে
সূর্যাস্তের
আলোর গোলাপী এসে নাচে
চোখের
কোণায় পাশে
শুকনো
জলের দাগে
ট্রাফিকের
ধূলোবালি জমে
মৃত
কুকুরেরা ঐ রাত নেমে এলে
নর্দমার
কালো জল
বাঁকানো
পিঠের থেকে মাংস আর নুন দিয়ে যাবে
শহরের
ফেটে পড়া হো হো হাসি
তাদের
শরীরে খুব লুটোপুটি রে
একঘেয়ে
চাপাকান্না গলির ভেতর থেকে এসে
তাদের
পায়ের কাছে হামাগুড়ি দেয়
অন্ধকার অন্ধকারে
মৃত
কুকুরেরা ।
সূর্যস্তোত্র
তোমার আশ্চর্য গতি নিত্য
উদ্ভাসিত
|
|||||
যেন স্বর্নপক্ষ পাখি আকাশ
-মন্ডলে
|
|||||
জী
|
উ
|
অ
|
ক্লা
|
||
ব
|
ন্মে
|
আগ্নেয়
|
কুসুম
|
ন
|
ন্তি
|
নে
|
ষি
|
ন্ত
|
হী
|
||
র
|
ত
|
প্রা
|
ণ
|
||
আ
|
জ্যো
|
ওঁ
|
ণে
|
প্র
|
|
দি
|
তি
|
র
|
ব
|
||
বী
|
র
|
উ
|
জ্যা
|
||
জ
|
উ
|
অমোঘ
|
প্রকাশ
|
দ্দী
|
তো
|
তু
|
চ্ছ্বা
|
প
|
মা
|
||
মি
|
স
|
না
|
র
|
||
হে আদিত্য জ্বলে ওঠে ধ্বান্তারি
বিভায়
|
|||||
এই সত্তা তোমার আলোর অনুগামী
|