60Th pOst : মঞ্জুষ দাশগুপ্ত


........মঞ্জুষ দাশগুপ্ত.......
(১৯৪২-২০০৩)
(কাব্যগ্রন্থ- অন্য বনভূমি, এত প্রিয় এখন পৃথিবী, ভালো আছ ভালোবাসা , অন্ধকার অন্ধ নয়, শীত শহরের বর্ষাতি, পর্বসন্ধি আগুনের ডানা’’ নির্বাচিত কবিতা, সাদা এত গ্রন্থিময়, স্বপ্ন নদী বইছে যদি, কবিতা সংগ্রহ -১ ও -২ ,   এখনও মৃত্যুর বিরোধিতা, একশ এক, স্বর্গ থেকে টেলিফোণ, প্রথম দিনে সূর্য ইত্যাদি...)

বরফের উপর আমার আত্মার লাল লিখে রাখি।
আমার রক্ত কখনো কালো ছিল না।
বিনীত ছিলাম বলে ভুল ভেবেছিলে।
প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করিনি কোনোদিন।
তোমার বিশাল ঘরে ছোট কোনটিতে
আমার ছায়া দেখে চমকে উঠো না।
আমি জানি প্রতিদিন তোমার আকাশে মেঘ করে থাকে।
প্রতিদিন.......


কবির মনোভঙ্গীতার উর্ত্তীনতা বোধহয় জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত্যুর অমূর্ত বিশুদ্ধতাতেই সৃজিত থাকে শৈল্পিক সুচেতনার। শাব্দিক যাপনে অক্ষর অলঙ্কারে সে কতটা কবি, শেকড়রহিত বর্হিগৃহের দিকে কতটা তার প্রানস্রোত, কতটা অনুভবের লতানো সন্ধ্যামালতী- তা বোধহয় মৃত্যুর পরই বীক্ষায় বোধে সঞ্চারিত চেতনার মেধায় প্রকৃত কবিকে ঋনী করে রাখে অগনিত উচ্চারনে । ষাটের দশকের কবি মঞ্জুষ দাশগুপ্ত। কবিতার, শব্দের শ্রমস্বেদের যে আপেক্ষিক বীজ পুঁতেছিলেন ১৯৬২ তে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম দিনের সূর্যতে-তাঁর মৃত্যুর এতদিন পরেও তিনি কোথাও বাঙালী পাঠকের দীর্ঘকালীন অভ্যাস হয়ে রয়ে গেছেন। ১৮ খানা কাব্যগ্রন্থ, ৩ টি কাব্যনাট্য বা স্বপ্নভূমি, ক্রশরোড র মত উপন্যাসের শেষেও তাঁকে আদ্যান্ত লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক হিসেবে, কবিতার প্রতিসমারোহের প্রিয়জন হিসেবে অনায়াসেই চিহিন্ত করা যেতে পারে। উদাসী সন্ন্যাসীর মত ছোট কাগজ বড়ো কাগজ প্রায় সর্বত্র যোগাযোগের সুযোগের বাইরে এসে তিনি যেন স্বেচ্ছায় লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক থেকে গেলেন। আদ্যান্ত রোমান্টিক কবি হিসেবে তাঁর পরিনত আয়োজনকে অনেকে তার কবিস্বত্তার একক আইডেনটিফিকেশন হিসেবে চিত্রপট করলেও তাঁর অনির্বার মনোজগতের এই কেবল একটিমাত্র দরজা নয়, তাঁর কবিতাকথা, তাঁর ছায়াতিমির মননের যাত্রাপথগুলি নির্বাচন থেকে বেরিয়ে এসে আরও এক সন্দিপ্ত সর্বাঙ্গীনে আক্রান্ত। কখনো অন্তর্লোকে বাজিয়েছেন সহজ প্রেমের আর্তি- বিনিদ্র দুপুর ধরে হেঁটে যাই/ - দূরে হেঁটে যাই/ আমি ভালোবাসা আর স্মৃতি আমরা তিনজনে/ ক্ষীনতম গংগা ধরে- রোদ্দুরের ম্লানরেখা ধরে...আবার এই নিশ্চয়তার ভেতরই তিনি খোঁজেন সেই তিমির পদক্ষেপগুলি, আস্তে আস্তে সেজে ওঠা একটা ক্রমান্বয়,একটা আঁধার একটা ভুল বানানের দিকে এগিয়ে যাওয়া জাগতিকের সমবেত অন্বেষন। যেখানে একটা অবারন অভিযাত্রার দিকে সাজিয়ে রাখা তাঁর আত্মনির্মিত অকূলবিস্তীর্ন পাণ্ডুলিপি। অন্তহীন পরিব্রাজকের মত মৃত্যুর পাশে বসে লক্ষ্য করেছেন হাওয়ার থেমে থাকাকে। মানসভ্রমনে তাঁর এই মাঠ পেরোনোর খেলা আমাদের অন্য এক মঞ্জুষের কাছে নিয়ে আসে-যদি চলে যাই-/- মূর্হুত বিষাদ শুধু ঝুলে থাকে বৃষ্টিবিন্দু কার্ণিশের ধারে/ এমন একটি আশা করা ভাল/ কেউ কি ফিরিয়ে দেবে সেই দাবি!....বাংলা সাহিত্যে এবং কবিতায় মঞ্জুষ দাশগুপ্ত খানিকটা স্তব্ধ অরন্যে কালো রঙের ঘোড়া নিয়ে বারে বারে ফিরে এসেছেন ফিরে যাওয়া গভীরের খোঁজে। তাঁর গোলাপী রঙের শটিফুল, তাঁর পরিচিত নক্ষত্রেরা, কিম্বা কঙ্কালের ভেতরে সাদা ঘুন আর সাদা ঘুনের ভেতর জীবন-যে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল সে বাড়িকেই তিনি সাজিয়েছেন বিদায় সম্ভাষনে আর অনন্ত দেওয়ালের থেকে খুঁজে ফিরেছেন ইন্দ্রিয়জ খানা-খন্দ-যাত্রাচিহ্নগুলো। এই মূহুর্তের কবিতা, প্রতিবাদ যখন কবিতা, তিন ভুবনের বাংলা কবিতা বা নজরুল নামা র মত কিছু উল্লেখযোগ্য সাহিত্যসম্পাদনার কাজেও তিনি অক্ষর ঝিনুক কুড়িয়ে তুলে রেখেছেন আশ্চর্য যত্নে। মঞ্জুষ দাশগুপ্তকে লিখতে লিখতে বার বার মনে পড়ছে ২০০৩ , ১৯ শে জানুয়ারী তাঁর মৃত্যুর পর শ্মশানযাত্রী কবির ভ্রমনের গল্পের পাশে লিখে রাখা অনুজপ্রতিম শুভব্রত চক্রবর্তীর সেই স্মৃতিচারনা- শ্মশানে যখন এলাম রাত্রি মিথ হয়ে আসছে। ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর গল্প শুরুর পালা। কি করে ঘুমন্ত রাজকুমারকে জাগাতে হয়। কি করে মৃত্যুপুরী জীবন্ত হয়ে উঠবে আবার। আর কবির ঘুম কে ভাঙাবে! তিনিই তো বাঙলা একাডেমির সামনে সাদা গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন সারা শরীরে রুপকথার গন্ধ মেখে; ঘুম ভাঙলো না আর। কেটে গেলো ক্ষন, পল ,মূর্হুত। এখন অন্তিম উষ্ণতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। লাইন, সাতটা দেহের পর। কত সময় লাগবে! রাত দুটো বেজে যাবে কেউ বলে উঠলো। একটা চিতা নিবে আসছে। আরও একটি দেহ ঢুকবে, জানি.....
                  নিবে গেল দীপাবলী; অকস্মা অস্ফুট গুঞ্জন
   স্তব্ধ হল প্রেক্ষাগারে। অপনীত প্রচ্ছদের তলে,
                  বাদ্যসমবায় হতে, আরম্ভিল নিঃসঙ্গ বাঁশরী
                  নম্র কণ্ঠে সরমী আহ্বান; জাগিল বিনম্র সুরে
                  কম্পিত উত্তর বেহালায় অচিরা !!

অধিবিদ্যা
মৃত্যুর বিরুদ্ধে থাকে গাছ। প্রতিবাদী। অক্সিজেন। নুন। ডেকাড্রন।
সবুজ সেবিকা পাতা। ছায়াহাওয়া। মনোরোগী পেয়েছে প্লেসেবো।

প্রায় সমার্থক কবি। কিছুটা সন্ন্যাসী। মন্ত্র পড়ে। অন্ত্যমিল নেই।
ধ্রুপদী ঈশ্বর ভাষা। সেও ছায়া। পাগল চাঁদকে ঢেকে দু-একটা ডালপালা।

সাদা কাগজের তন্তুর ভিতরে গাছ। কবির অক্ষরগুলি দৃশ্যত উপরে।
মৃত্যু বেঁকে যায়। তীরন্দাজ ভুল করে। অশ্বারোহী ফিরে যায়। একা।

বৃষ্টিগান লেখে গাছ। নদী সুরারোপ করে। অলংকরনের কাজ করে মেঘ।
বিমূর্ত শিল্পের কথা মনে পড়ে। প্রতীকে মৃত্যুর বিরোধিতা।

গাছ জানে কবি জানে শেষহীন জীবনের জন্যে গূঢ কথা


চিঠি

সিন্ধু সভ্যতার মত চিঠি তুমি পুরাতন হয়ে গেছ কত...
ঠাঠা রোদ্দুরের মধ্যে মফঃস্বলী কিশোরের অপেক্ষার চোখ
কখন হারিয়ে গেছে
এস টি ডি আই এস ডি বুথে
এমনকি পি সি ও-র কাচের ওধারে
কথা বিনিময় হয়
মোডে মোডে ফ্যাক্সের কিওস্কে দাঁড়িয়ে
কী দ্রুত সিদ্ধান্ত সমাপন
নীলখাম ছবি আঁকা পাতা
ভাঙাচোরা হৃদয়ের ভুল বানানেরা
আর কোনোদিন তুমি মধ্যবিত্ত মধ্যরাতে জানালার ধারে
আমাকে বসিয়ে রেখে
ঘুমশব্দ কুচি কুচি করে
পারবে কি হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে...

সিন্ধু সভ্যতার মত চিঠি তুমি পুরাতন হয়ে গেছ কত...

ভ্রমনের গল্প

অন্ধরাত্রি। ঘনতর মেঘে। বৃষ্টি আসে আসে। সে কি আসে?
উঠোন পেরিয়ে আমি চলে যাচ্ছি পথে। প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই।
কখনো সে আসে নি তো। আমি তার দরোজার পাথরে পাথরে ঢেলেছি আতর
বলে যাই শরীর শরীর নিয়ে কুসুমের কান্নাজল নেই। প্রেম নেই। ছক আছে।
গণ্ডী আছে। সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ পরে নেওয়া আছে।
উঠোন পেরিয়ে আমি চলে যাচ্ছি পথে।

সকাল সাতটা চল্লিশ মানে রবীন্দ্রসঙ্গীত। আর তুমি। প্রতিদিন।
পুরোনো হবে না কেউ। কোনো মৃত্যু নেই।
এখন এস্রাজ বাজে। শব্দহীন বনমাঝে। মনমাঝে?

গরুবাথানের ঠান্ডা ভোর মনে আসে। পিছনে পাহাড়।
টিলার উপরে সেই ফরেস্ট বাঙলোর শান্তসন্ধ্যা।
তিস্তা, লিস, ঘিস নদীগুলি সঙ্গে এসেছিল। থেকে গেল
থেকে যায় রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং তুমি।
               
আমি চলে যাব। মৃত্যুরাত কেঁদে উঠবে। দুদিন কুয়াশা।
তারপর ছাই     শুধু ছাই



চর্যা গান

অপেক্ষার সিংহকেশরের কথা
ট্রেন আসবার আগে মনে এলো।
ওদিকে হরিন মাংস ঝুলে আছে জঙ্গলের তার।
গুহাচিত্র থেকে কারা বেরিয়ে এসেছে।
এখন প্রতীক্ষালয়ে মাঝরাতে
স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের আধো ঘুম।
শান্ত মিহি বৃষ্টি আসে স্টেশন চত্বরে।
মৃদু বিটোফেন।
শীতবৃষ্টি বড় বেশী কাঁপায় ভেতরে।

সিংহ ও হরিণ দূরে থাকে।
তুমি আসবে না। বিদ্যুত চমকালো।
ট্রেন এলো। ;জতুগৃহে তখন আগুন ।


জন্ম

গা থেকে গয়নাগাটি সব খুলে নাও
পা থেকে পায়মল জোড়া
মায় নাকছাবি,
ডালপালাহীন গাছ যেমন দেখায়।
হৃদয়টিদয় সব যাদুঘরে মমি করে রাখো
ভবিষ্যত প্রত্নতাত্ত্বিকের
কাজে লেগে যাবে
ক্যালকুলেটারের সমস্ত ক্লিয়ার
বোতামটি টিপে দাও
স্মৃতি নামে প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে থাক।
এখন সময় এরকম।
যন্ত্রের মানুষ আমরা যন্ত্রের মানুষী
দুজনে মিলিত হয়ে
জন্ম দেব যন্ত্রের সন্তান।

 


ইচ্ছাপত্র

প্রথামত
আমাকে দিও না গঙ্গাজল
গঙ্গায় গিয়েছে ভেসে আমার অজস্র ভাইবোন
যদি পারো
পরিশ্রুত জল ঠোঁটে দিও
দূষনে কার্বনে গেছে অপচয়ে সারাটা জীবন
কাঠের চিতায় নয়
বৈদ্যুতিক চুল্লীতে পোড়াও
আরেকটি গাছের মৃত্যু আমার মৃত্যুর সাথে সাথে
চাইতে পারি না।

কবি
(১)
হাত ধরলেই আকাশ। নীল লেগে যায়। ছাড়লে শূন্য। কনকনে ঠান্ডা। পক্ষাঘাত মাথার ভিতরে আরোহী অবরোহী। যুক্তি এবং সিদ্ধান্ত। ডানদিকে শুধু পাগল হাওয়া। সুনসান স্বপ্ন গান। অন্ধকারও বুদ্ধিমান দুদিক মেলায়। কবি ঝুঁকে থাকে একদিকে।

(২)
আজ মঝু গেহ সফল করি মানলু। ঋতু ঠিক। চাঁদ আছে। তুমি নেই। নেই বলে এখন সাঁতার। অন্ধকারজলে। পার হই ধ্বনি নদী। অক্ষর-নক্ষত্রমার্বেল ফেলে যায়। টুং শব্দ হয়। ঠিক গান নয়। কান্না বাজে। প্রতিটি কাঁটাই রক্ত। পিপাসাকে লালন করেছে। তুমি কাঁটা নও।তোমার প্রস্থান। ছায়াও রাখেন। রক্তফুটকি অন্ধকার আকাশের মার্বেল পেপারে।

বিজয়িনী
রক্তাক্ত করেছে মেয়ে শঙ্খসাদা আমার হৃদয়
কেড়ে নিল তপস্যার গিনিগলা সোনালী সময়
জ্বেলে দিল দীপ্তদীপ- সে আগুনে সব কিছু ছাই,
তবু হায় শক্তি নেই তাকে ছেড়ে সূদূরে পালাই।

সর্বনাশ আঁকা ছিল কেশবতী মেয়েটির চুলে
সর্বনাশ লেখা ছিল তার চোখে ঃ ঢেউ তুলে তুলে
আমা সমুদ্রমন তার কাছে করে সমর্পন
অনেক প্রবাল মুক্তো ঃ রুপবতী হাসছে এখন।

সূর্য-প্রনাম করা হোলো না আমার এ সকালে
চেয়ে থাকি চোখ তুলে রক্তছোপ শিরীষের ডালে।

কিউ

লম্বা কিউ। সরে আসি। লাইনে দাঁড়ানো মানশষেরা। পাসপোর্ট চায়। ভূমধ্যসাগরের গন্ধ
কিলবিল করে চুলে। তেল গডায়।মেয়েটির হাতে পেঙ্গুইন। সঙ্গিনীস্বপ্নকে নিয়ে জাহান্নমে যাই। জিন্নতত্তে। লম্বা কিউ। পিছনে দাঁড়াই। অপেক্ষা ফুরাবে কোনোদিন।

লৌকিক থেকে

ঝুপ। লোডশেডিং। বন্যাজল ছুটে এলো। আঁধার একেলা ঘরে। মন মানে না। সূতাশঙ্খ সাপ ঘোরে ভাবনার ভিতরে। আঁধার আমার ভালো। পাহাড়ী শহরে সেদিনও এমন। শুধু তুমি ছিলে। হাত ছিল উষ্ণ এক হাতের তালুতে। দুজনেই পথে। পথ হারাবার নেশা এ ওর ঘাড়ে পড়া গাছেরও। অন্ধ ভালোবাসা অন্ধকারে পথ ও শরীর চেনায়। ফিকে টর্চ-আলো পড়ে দূরে। খুঁজতে বেরিয়েছে ওরা হারিয়ে যাওয়া আমাদের। ছিটকে আসে ট্রানজিস্টারে গান। সম্বিত ফিরেছে সমতলে। খসে পড়েছে ওড়া পাখি। রাতচরা পাখি।


ছাপ

বামদিকে নদী। দক্ষিনে ঘন গাছ।অন্ধকারে। আকাশে টুকরো চাঁদ।
পথ শুধু পথে টানে।
ওপাশে বরফকল। লিকুইড নাইট্রোজেন তাপাঙ্ক নামায়। নিচে। পৌঁছে
দেয় মেরুদেশে। মেরুদণ্ড শিরশির করে।
শূন্যতার ভয়। কুরে খায়। খুটে খায় নির্বাকপ্রতিমা। হাঁটে পাশাপাশি
দৃশ্য নয়। হাওয়া। হাওয়ার ভিতরে চাঁদ বরফকলের মত।
ঘুনপোকা মৃদুটানা শব্দের করে। সেন্টার ক্যান নট হোল্ড। চলে যাওয়া
পথে সাপ বুকছাপ কখনো রাখে না।

রিলে রেস

অসম্পূর্ন পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে স্তব্ধ বসে থাকে।
শব্দের ভিতরে ঢুকে, বাস করে, এক অভিমান শব্দ হয়ে গিয়ে
সে পারেনি- দিগন্তের মুখে তার বসন্তের দাগ। আজও।

ইন্টারনেটে চ্যাট করা মহানগরীর মেয়ে
ঠাকুমার কাছে এসে গ্রামে
গোলাপি রঙের মাটি ফুল দেখে
ভাবে তার কত কী অচেনা আছে! কত কত আবিস্কার বাকি।

এরকমই থেকে যায় নদীজল মানুষের বুকে অন্ধকার
মুগ্ধতার বন্ধ দ্বার কিচ্ছুক্ষন খুলে যায় শুধু কিছুক্ষন
কতটুকু ধরা যায় তার আগে বৃষ্টি এসে সমস্ত ভাসায়
ভাষা খুব অসহায়- অনন্ত পুরানে সেই একই গান বাজে

উত্তরসূরির কাছে অভিজ্ঞতা রেখে যেতে হয়।

ভালোবাসা
হাত পেতে আছি দাও
চোখ পেতে আছি দাও
বুক পেতে আছি দাও

অবহেলা দাও      অপেক্ষা দাও
বিশবাঁও জলে
আমাকে ডোবাও
তুলে এনে ফের
আমাকে ঘোরাও
যাক ঘুরে যাক
নাগর দোলাও
দাও তুমি দাও      অপমান দাও
চাও বা না চাও     নাও
পুড়ে খাঁটি সোনা নাও
আঁচলে বেঁধো না তাও

এতো তুচ্ছতা প্রাপ্য আমার?
সিঁড়ি খুঁজে চলি নরকে নামার
অন্ধ ভ্রমর গেঁথেছে অমর
শব্দপুঞ্জ ডানায় তোমার
কী অর্থ তার বুঝবে কী আর!
সিঁড়ি খুঁজে চলি নরকে নামার
শুধু ধ্রুবপদ তোমাকে দিলাম
ভালোবাসা নাও ভালোবাসা নাও
তোমার জন্য জীবন নিলাম
করেছি বলেই
শুধু শূন্যতা বিনিময়ে দাও

হাত পেতে আছি দাও
চোখ পেতে আছি দাও
বুক পেতে আছি তাও