56Th pOst : অজিত দত্ত

অন্ধকারে একটি পাখির ডানা স্পষ্ট শোনা গেল। অন্ধকারে ফুটেছে গোলাপ কীর্ণ হাস্নুহানা, বাগানের সম্পূর্ন.....আলোক সরকার...
সামগ্রিকে আবিস্কার হয়েই কবিতা হারিয়ে যায় তার সার্বিক নিজস্বতা রেখে । অথচ সংগোপনের ভাঙা ডালে কখনও সখনও এসে বসে এমনই সব হারিয়ে যাওয়া কবিতারা কোন এক নীরবের বিশুদ্ধ নিয়মেই । ফেলে আসা পথের স্বাদকোরকগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হতে চায় কবি, প্রসন্ন হতে চায় পাঠক।  হারিয়ে যাওয়া কবিতা খুঁজতে আমাদের পরিসর হোক এমনই সহজ অজানার। অন্ধকার রঙের।

অজিত দত্ত-

জন্ম ১৯০৭-মৃত্যু ১৯৭৯। পঞ্চাশ-ষাটের  বাংলা কবিতাশ্রমের কিছু বিরল প্রতীতিকেই আইডেন্টিফাই করে এই অধ্যাপক কবির কাব্যপ্রতিভা । কবি বুদ্ধদেব বসুর সমসাময়িক ছিলেন অজিত দত্ত। প্রথম বই কুসুমের মাস প্রকাশিত হয় ১৯৩০ এ আর প্রথম বইয়েতেই মালতীমালতী ঘুমায় কবিতার মধ্যে দিয়ে তিনি রেখে যান প্রণয়ের নতুন সংস্করন। মূলত সাধুভাষায় প্রেম বন্দনার এই নান্দনিক প্রয়াস ততকালীন কবিতা আঙ্গিকে আমদানি করে রোমান্টিকতার এক নিলীন গুঞ্জন। এত বৃহ আকারে সনেট সমকালীন কোন কবিই লেখেননি। পরবর্তীকালে পাতাল কন্যা, নষ্ট চাঁদ, পূনর্ণবা, ছায়ার আলপনা, জানালা র মতো আরও কয়েকটি বই প্রকাশ পেলেও প্রচারবিহীন কবির মুল্যায়ন বাংলা সাহিত্যে অধরাই থেকে গেছে। ১৯৭০ এ তার শেষ কবিতার বই শাদা মেঘ  কালো পাহাড় প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু রুপান্তর বা অনুবাদের কাজও তিনি করে গেছিলেন। কবিতার পালাবদলে এসেছে আর্থসামাজিক, দার্শনিক এবং মূল্যবোধের রুপান্তর কিন্তু সেই তুলনায় অজিত দত্ত বিষয়ের পরিসর থেকে ক্রমাগত বহুরৈখিক হলেও কোথাও স্বরুপের কাছে তার শেষ কবিতা পর্যন্ত ছিলেন আত্মীকৃত। মুল্যায়নভ্রমে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য কবির মধ্যে কবি অজিত দত্তের নামও হয়ত উঠে আসবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তার সেই সংখ্যাতীত বিস্মৃতির পাশে খুঁজে পাওয়া বিশ্রামের পথ থেকে যাবে অস্পষ্ট তবু কি নতুনের কৌতুহল নেই এই অজানা প্রানরসের?.....

কুসুমের মাস...

তুমি ফুল ভালোবাসো? লাল ফুল? চোখে যাহা লাগে?
কঠিন সৌন্দর্যে যার নয়ন সে হয় প্রতিহত?
তুমি ভালোবাসো ফুল? শেফালিকা সৌরভ-আনত?
যে-ফুল ঝরিয়া পড়ে ক্ষীনাঙ্গুলে স্পর্শিবার আগে?
আননে লেগেছে তব কেতকীর সৌরভ-দুকূল?
হৃদয়ে কি বাজিয়াছে প্রগলভা হেনার উচ্চহাসি?
তুমি ভালোবাসো ফুল? কদম্ব সে বরষা-বিলাসী?
অথবা কুন্ঠিতা কণ্যা অতসীর কোমল মুকুল?

আমিও কুসুমপ্রিয়। আজিকে তো কুসুমের মাস।
মোর হাতে হাত দাও, চলো যাই কুসুম-বিতানে।
বসিয়া নিভৃত কুঞ্জে কহিব তোমার কানে-কানে,
কোন ফুলে ভরিয়াছি জীবনের মধু-অবকাশ।
লঘুপদে চলোযাই, কেহ যেন আঁখি নাহি হানে,
নিশ্বাসে জাগে না যেন তন্দ্রাস্তব্ধ রাতের বাতাস ।।
                                              ( বই;- কুসুমের মাস- ১৯৩০)


মালতী ঘুমায়...

বৈশাখী হাওয়ার বেগে তারাগুল্লি কাঁপিতেছে
          ক্ষীন-শিখা প্রদীপের মতো,
    - এখন বাহিরে কত রাত?
নিশীথের হাওয়া আজ আফিমের নেশার মতন,
( মালতীর চুলগুলি চোখের পলকে চুমু খায়),
বাতাসে আসিছে ভেসে দূর হতে অস্পষ্ট গুঞ্জন,
    ( ঘুম এসে নয়নে জড়ায়)।
পত্রের মর্মর আর শোনা যায় বাতাসের স্বর,
নিঃশ্বাসে কাঁপিয়া ওঠে ক্ষুদ্র তারা, ক্ষীনায়ু প্রহর।
( ঘুম কি ভাঙিয়া যাবে কপালে রাখিলে হিম হাত?)
     - এখন বাহিরে কত রাত?

একরাশ কালোচুল উতরোল এ-বাতাসে
            একেবারে হল এলোমেলো ;
    - এবার বৈশাখী ঝড় এলো!
কাঁপিছে দালান কোঠা সমুদ্রের জাহাজের মতো,
(বাতাস সরায়ে দিলো লঘু হাতে বুকের আঁচল)
এখনি ঝাপটে ছিঁড়ে উড়িয়া পড়িবে তারা যত।
    ( শুভ্র বাহু, পাটল কপোল)।
বাতাসে আসিছে ভেসে জল-কণা ঘরের ভিতরে,
সমস্ত আকাশ এসে জানালার কাছে ভিড় করে।
( নেমেছে চুমার মতো ঘুম ওর পলকের পর)
    - এলো কাল বৈশাখীর ঝড়!
ঘুমন্ত দৈত্যের পুরী অকালে জেগেছে আজ,
            রক্ষা নাই, নাই আর গতি,
    ( জেগে যেন ওঠে না মালতী!)
পাতালের যত নাগ আকাশে মেলিছে লক্ষ ফণা,
(সাবধানে সবগুলি জানালা দিয়েছি বন্ধ করে),
এ কী হুলুস্থুলু কান্ড! আকাশে যে গ্রহ রহিল না।
    ( আমি আছি বসিয়া শিয়রে)।
লক্ষ দৈত্য ব্রম্ভান্ডেরে ছিঁড়িয়া ফেলিছে কুটি কুটি,
তুলিয়া ধরেছে তারা বিদ্যুতের মশাল দেউটি ;
আমি জানি, কার খোঁজে নাগদৈত্য ছুটিতেছে রাগে।
    ( ভয়, যেন মালতী না জাগে)।
                                      
ওই শোনো দুড় দুড় লক্ষকোটি নাগদৈত্য
             ঊর্ধ্বশ্বাসে পলাইছে ত্রাসে,
    - মত্ত ঝড় শান্ত হয়ে আসে।
শাখার উন্মাদ নৃত্য ধীরে ধীরে হয়েছে মন্থর,
( বিদ্যু গিয়েছে ছুঁয়ে মালতীর কম্পিত চুমায়),
ঝাপটে ঝরিছে পাতা, স্বচ্ছ হয়ে আসে দিগন্তর,
    ( অপরূপ! মালতী ঘুমায় )।
শঙ্কিত ডানার নিচে পৃথিবীরে লুকাইয়া কোলে
আশঙ্কায় কাঁপে রাত্রি, দুটি তারা ভয়ে আঁখি খোলে।
( স্বপ্নে উঠিয়াছে কেঁপে মালতীর আরক্ত অধর)
    শ্রান্ত হয়ে এল মত্ত ঝড়।

মেঘমুক্ত স্বচ্ছাকাশে তারাগুলি ফুটিতেছে
                শুভ্রদল শেফালির মতো,
    - এখন বাহিরে রাত কত?
 দেবতা নিক্ষেপি বজ্র তাড়ায়েছে অমঙ্গল যত,
(পৃথিবী হয়েছে হিম মালতীর ঘুমের লাগিয়া)।
এলায়ে পড়েছে রাত্রি নিদ্রাক্লান্তা মালতীর মতো,
    ( আমি আজ থাকিব জাগিয়া)।
ঘুমায় দূরের বন, ঘুমে ঝরে কুসুমের জল,
ঘুমায় পাথার-পুরী, ঘুমাইছে ক্লান্ত দৈত্যদল,
( জাগিয়া উঠিবে না তো ধরি যদি ওর দুটি হাত?)
    - এখন বাহিরে কত রাত?
                                              ( বই;- কুসুমের মাস- ১৯৩০)


ছায়া...

কাল রাতে একলা আঁধার পথে শহরতলীতে
দেখলুম অদ্ভুত মেয়ে এক।
সেখানে অশত্থ ঝোপ নিঃধুম ছবির মতন,
এতটুকু হাওয়া নেই, জোছনাও ফোটে নি তখন,
দেখলুম আকাশের ময়লা আলোতে
আবছা ছায়ার মতো মেয়ে এক

যদিও বাতাস নেই, তবু যেন দেখলুম অদ্ভুত,
উড়ছে হাল্কা চুল, উড়ছে হাওয়ার মতো, আবছা।
যদিও জোছনা নেই তবু যেন দেখলুম অদ্ভুত,
পাপড়ির মতো তার চোখের পলক নত, আবছা।
নিঃঝুম জটবাঁধা অশত্থের ঝোপের ছায়ায়
ওড়নার মতো তার মুখখানি অর্ধেক ঢাকা,
দেখেছি অলক তার, দেখেছি পলক তার, আর
দেখেছি শরীর তার বাঁকা।

কালকে আবছা রাতে দেখেছি যে অদ্ভুত শহরতলীতে,
বিছানায় শুয়ে তাই ঘুম নাই চোখে এতটুকু;
যদিও ছিলো না হাওয়া, যদিও ওঠে নি চাঁদ কাল,
যদিও দেখে নি তার মুখ ।।                            ( বই;- কুসুমের মাস- ১৯৩০)



পুলিশ...

নিঝুম নিশুতি রাতে যখন ঘুমোয়ে থাকে কবি,
নবোঢা ঘুমায় যবে, নব-প্রেম-মুগ্ধা ঘুম যায়,
নক্ষত্র-খচিত-কেশা শর্বরীরে কে দেখে তখন?
নিদ্রার গুন্ঠন তুলি ধরা পানে কে তখন চায়?
তখন সে শিহরিত ছায়ার আড়ালে
চকোর ফুকারে যদি, দোয়েলায় দেয় যদি শিস,
কান পেতে শুনে ভাবে দূরে কোথা হুইসল বাজে-
একমাত্র জাগরুক রাস্তার পাহারা পুলিশ।

দেখে না সে আকশের জ্যোসস্নার জরির ওড়না
শ্লথ হয়ে খসে গেছে নতজানু মর্তকরপুটে,
দেখে না সে ফুলগুলি সহসা মেলিতে চায় ডানা
দিবসের নিদ্রা হতে তারার চুম্বনে জেগে ওঠে।
জানে না সে ঘাসগুলি শিশিরে হয়েছে মখমল,
বাতাসে ঝরিছে পাতা, তার সে রাখে না কোনো খোঁজ,
তবুও নিশীথ রাত্রে নিদ্রিত ধরার প্রতিনিধি
পুলিশ একাকী জাগে রোজ।

শরতের শিশিরের কণাগুলি ঝলমল করে
চুনির মণির মতো চাঁদের আলোর নিচে নিচে,
পুলিশ তাকায়ে ভাবে নিশ্চয় রক্তই হবে,
খুন ভেবে শশব্যস্ত হয়ে ওঠে মিছে?
রাত্রির বিজন বনে পরীদল খেলা করে রোজ,
গাছের পাতারা ডেকে কথা কয়, পাখি দেয় শিস,
তার মাঝে সারারাত চোরের ভাবনা ভেবে জাগে
রাস্তার পাহারা পুলিশ!..............                        ( বই;-পাতালকণ্যা-১৯৩৮)



নষ্টচাঁদ...

এ-আষাঢে শেষ হোক কান্নার বন্যা
ও-আষাঢে লেখা যাবে মেঘদূত,
কবছর মন দিয়ে করো ঘরকন্না
বুড়োকালে প্রেম হবে অদ্ভুত।
মুখোমুখি বসে শুধু সকালে ও সন্ধ্যায়
দম্পতি-সুখ বলো হয় কার?
সংসার-ধর্মেতে যে মেয়েরা মন দ্যায়
পৃথিবীতে তাদেরি তো জয়কার।

মেয়েমানুষের বেশি মন থাকা উচিত না,
আমাদের মন তাই পারিনেকো সামলে।
রুদ্র-গ্রীষ্মে আকাশে থাকেই তো তৃষ্ণা
সব মিটে যাবে চোখের বর্ষা নামলে।
দুটো পয়সার সাশ্রয় কিসে হবে
সেদিকে বরং পারো যদি চোখ রাখতে,
বুড়ো হয়ে যদি বেঁচে ও বর্তে রবে
পাকা-বাড়ি করে সেখানে পারবে থাকতে।

শখ-টখ যত সবই জেনো ছেলেমানুষি
কুড়ির পরে কি ও-সব রাখতে আছে?
জীবন তো নয় সুখের জোয়ারে পানসি,
আসল প্রশ্ন প্রানটা কী ভাবে বাঁচে।

হঠা সেদিন গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখি
আগ্নেয়গিরি মেঘের চূড়ায় গলিত চাঁদের ধারা।
পাশ ফিরে শুই ; চাঁদের ভেল্কি সবই জানা গেছে মেকি,
মিথ্যে শর , নেহাই মিথ্যে আকাশ-ছড়ানো তারা।
তুমি পাশে থাকো রুপোর কাঠিতে মূর্ছিতা চিরদিন-
গৃহিনী-সচিব-শিষ্যা এবং-এবং কি জানি কী যে,
জানি না, জানতে চাইনে, জানলে রোজগার হবে ক্ষীন,
চাঁদ তো উপোসে মরে না, কিন্তু বেঁচে থাকা চাই নিজে ।।
                                               
                                              ( বই;-নষ্টচাঁদ-১৯৪৫)



আমি...

রাত্রি আর প্রভাতের মধ্যবর্তী দুর্জ্ঞেয় সেতুর
অন্ধকার প্রান্তে আমি সম্মুখ-পথিক,
হেমন্তে উড্ডীন যেন শ্যামাকীট, ভ্রান্ত-দিগ্বিদিক,
শূণ্য আস্ফালনে সুচতুর।

আমি ভোগী গৃধু, তবু নমস্য শ্রদ্ধেয়,
আমি স্বগর্চ্যুত দেব,পাপ তবু সহায় আমার,
জোনাকির আলোব সৌরদীপ্তি আমারি আত্মার,
আমার নিন্দিত যা তা অবশ্যি হেয়।

আমি সত্যবেত্তা, আমি মান্য ও মানিত,
আমি সুখ শান্তিদাতা ভবিষ্যতে, বর্তমানে যদি
আমার ইঙ্গিতে দুঃখ-দুর্দশার চূড়ান্ত অবধি
অন্যলোকে ভোগ করি মোরে করে প্রীত।

আমি অন্ধ, তবু আমি পথের নির্দেশ করি দান,
হিংস্র আমি, শান্তি তবু আমারি কবলে,
একা আমি, তবু শ্রেষ্ঠ নির্বোধের দলে।
মানব-আত্মার আমি যথা-ইচ্ছা করি অপমান।


সৌন্দর্যের ধ্বংসকারী,বিকেলের নিষ্ঠুর বিজেতা,
তবু আমি হৃদয়ের ঐশ্বর্যের একক ভাণ্ডারী,
দুর্বল, তথাপি আমি পৃথিবীতে ছিঁড়ে দিতে পারি,
আমি নেতা  .।।

                                              ( বই;-পূনর্ণবা-১৯৪৬)




নেশা...

আফিঙের লাল ফুলে যেন এক অলস মৌমাছি
স্বপ্ন দেখে আর দেখে। শিহরিত পাখার রেশমে
রোদের সোনার বুটি বুনে যাওয়া শেষ হয় ক্রমে,
সূর্য বুঝি গেল চলে পশ্চিম-প্রান্তের কাছাকাছি।
ভুলের সূতোয় গাঁথা জীবনের সরু মালাগাছি
এখনি শকায়ে যাবে সংসারের সর্বভুক হোমে।
আয়ুর প্রবাহে আঁকা যত ছবি স্বপ্নের কলমে
যতক্ষন না হারায়, মনে হয় যেন বেঁচে আছি।

রামধনুরঙে মেশা এই নেশা অভিশাপ আনে,
ব্যর্থতায় মুছে যায় ধর্ম-অর্থ-সমাজ-সংসার
ভুলের দ্বিতীয় স্বর্গ তবু গড়ে চলি বারবার,
স্রষ্টার যে প্রতিদ্বন্ধী মুক্তি তার কাছে কোনখানে?
কৃতিত্বে কি কর্মে যার নাই দাম, নাই কোন মানে
নেশার সে নির্বাসনে খুঁজি চিরন্তন অধিকার ।।

                      ( বই;-ছায়ার আলপনা-১৯৭১)




কী পেলে? কী পেলে?...

এত বড় নীলাকাশে এক সূর্য জ্বেলে
বলো তুমি কী পেলে? কী পেলে?

যখন ও সূর্য যায় ডুবে,
আমি তো জ্বালাতে পার ঊর্ধ্বে অধে উত্তরে ও পূবে
প্রচন্ড উজ্জ্বল দাবানল।
দ্যাখো নি কি অন্ধরাত্রে আমার কৌশল?
আমারি ভিতর থেকে একটি নিমেষে
লক্ষ কোটি বহ্নি জ্বেলে বিশ্ব ভস্ম করে দিয়ে শেষে
নূতন তমিস্রা আমি ডেকে ডেকে আনি বারবার।
স্বর্গ মর্ত মূহূর্তেকে দীপ্ত করি, ক্ষণে অন্ধকার।
শূন্যতার থেকে আমি আগুন জ্বেলেছি নিজে নিজে,
আমার ললাট থেকে অকস্মাত জ্বলে ওঠে কী যে
আশ্চর্য ভীষন অগ্নি- জানো না কি কত তার দাহ?
পম্পাই ভস্মের পরও গলিত লাভার পরিবাহ।

আর তুমি দিনমানে মহাশূন্যে এক সূর্য জ্বেলে
বলো দেখি কী পেলে? কী পেলে?


( বই;-জানালা-১৯৫৯)



হে বিষন্ন নাগরিক...

হে বিষন্ন নাগরিক, বিমর্ষতা ত্যাগ করে হাসো।
স্টল থেকে ফুল কিনে মজবুত সুতোয় বেঁধে
গৃহ সুসজ্জিত করো।
চার দেয়ালের গায়ে শরত মেঘের চেয়ে
উজ্জ্বল শুভ্রতা, দ্যাখো,
চাঁদের চেয়েও ঢের জোরালো লণ্ঠনে উদ্ভাসিত।
পৃথিবীকে ঘরে বসে উপভোগ করো,
সুধাপানে তৃপ্ত হও সুখস্বর্গ-বাসী।
নাগরিক, বিষন্ন হয়ো না।

জানলায় দাঁড়িয়ে দ্যাখো কি মসৃন রাস্তাঘাট,
চড়াই-উরাই হোঁচট- ঠোক্কর নেই।
তুঙ্গ রাজপ্রাসাদের সমারোহ কিবা মনোহর
যতদূর দৃষ্টি চলে,
হীরে-মুক্তা-মাণিক্যের ইন্দ্রজালে গড়া ইন্দ্রপুরী।
তোমার ঐশ্বর্যলোকে ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিনী
জাদুমন্ত্রে বাক্সবন্দী।
সপ্তসিন্ধু না গিয়েও রথারুঢা রাজপুত্র রাজকণ্যাগনে
দেখে দেখে ধন্য হও।
এখানে অজস্র প্রেম শস্তাদরে অল্পায়াসে পাবে
ভাগ্যবান নাগরিক, বিষন্ন হয়ো না, তুমি হাসো ।।

                             ( বই;-সাদা মেঘ কালো পাহাড়-১৯৭০)



ঘাস.....

অস্টারলিস আর ওয়ার্টালুতে দেহগুলোকে স্তুপ করে রাখো;
তারপর কোদাল চালিয়ে সেগুলিকে মাটির নিচে চালান করে দিয়ে
                         আমাকে কাজ করতে দাও
আমি হচ্ছি ঘাস, আমি সব ঢেকে দিই।
আর গেটিসবার্গে সেগুলি দিয়ে উঁচু স্তুপ বানাও,
উঁচু উঁচু স্তুপ করো ইপ্রেস আর ভার্দুনে।
তারপর কোদাল মেরে সেগুলিকে মাটির তলায় ঢুকিয়ে
                        আমাকে কাজ করতে দাও।
দু বছর, দশ বছর, তারপর যাত্রীরা কণ্ডাকটারকে জিজ্ঞেস করে,
                        এটা কোন জায়গা?
                        আমরা এখন কোথায় আছি?
আমি হচ্ছি ঘাস।
আমাকে কাজ করতে দাও।

                                              ( অনুবাদ কবিতা- কার্ল স্যাণ্ডবার্গ এর কবিতা থেকে)

একজন তরুন কবির প্রতি...

মহাকাল পাখিটার থেকে পাখির ডানাটা কেড়ে নিতে পারে না।
পাখি আর পাখির ডানা
একই সঙ্গে তলিয়ে যায়,
ঠিক যেন একটি পালক।
যা কিছু কোনোদিন আকাশে উঠেছে,
তা সে ভরতপাখিই হোক কি তুমিই হও,
আর পাঁচজনের মতো মরে যেতে পারে না।

                                              ( অনুবাদ কবিতা- এডনা ভিনসেন্ট মিলে র কবিতা থেকে)