........তুষার
রায়.......
(১৯৩৫-১৯৭৭)
(কাব্যগ্রন্থ- ‘ব্যাণ্ডমাস্টার’, ‘গাঁটছড়া’, ‘মরুভূমির আকাশে তারা ’, ‘অপ্রকাশিত তুষার ‘...)
সেপ্টেম্বর ১১,১৯৭৭।বালির পাহাড়
নিয়ে খেলতে খেলতে আর শব্দের ঝিনুকে পকেট ভর্তি করতে করতে বিষাদের চিহ্নগুলোকে আরও
বড় করে ফিরে গেলেন ব্যান্ডমাস্টার।‘দুপাশের
বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলোনা ছেলেমেয়েরা’ , ‘কোথাও পতাকা অর্ধনমিত হোলোনা’,কেবল শান্তিতে পুড়ে গেল ব্যান্ডমাস্টার
আর তার বিলীয়মান শব্দ।মৃত্যুকে নিয়ে উপহাস মৃত্যুকে নিয়ে যার বাজি যার অস্থিমজ্জা
লোহিতকনা সব অনিয়মের ব্যকরণে ভরা ,তিনি তো জ্বলতে চাইবেন না প্রদীপ বা প্রণামের মত,
সেটাই তো স্বাভাবিক,বরং সব আলো জ্বেলে আমরা যখন ঘুমাবো, সব কবিতা লিখে আমরা যখন
ঘুমাবো তখন তিনিই একমাত্র দেশলাই জ্বেলে জ্বালিয়ে দিতে পারেন তারই শরীর।রক্তের
ভেতর চলমান শেকড় রক্তের ভেতর বিস্ফোরনের শব্দ এভাবেই কি বাংলা কবিতাকে সেলিব্রেট
করতে চাইলেন তুষার! আশ্চর্য আপেল রঙ তার
অনাবিস্কৃতই রয়ে গেল অথবা তার উত্তরসন্ধানে ছিলইনা কোন মহৎ কবিতা কোন পূর্বজন্ম
কোন পরজন্ম।মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে দূষিত রক্তকে নিয়ে যেভাবে নিজেকে ধ্বংসের যোগ্য
করে তুলেছিলেন রঅ্যাঁবো, ঠিক সেভাবেই কি ইন্দ্রিয়সমূহের সচেতন বিশৃঙ্খলা সাধনই হয়ে
উঠল তরুন কবিদের ‘মুকুটহীন
রাজা’ ‘ব্যান্ডমাস্টার’ তুষার রায়ের কবিকর্ম!তিনি কি
রঅ্যাঁবোর মতই ঘোষনা করলেন-‘দি পোয়েট টানর্স হিমসেলফ ইনটু
ভিসনারি বাই এ লং, ড্রাসটিক অ্যান্ড ডেলিবারেট ডিসঅডারিং অফ অল হিজ সেন্সেস’!তুষার রায় প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে অন্তিম অজ্ঞতা অন্তিম সংকোচ পেরিয়ে আসা এক
উচ্চকিত ডিকশন,যেখানে কবি নিজেরই রক্তের চাপ বাড়িয়ে রেখেছেন , নিজেই সাজিয়ে
রেখেছেন নিজের চিতাকাঠ,সমাজ স্রোত আর প্রতিষ্ঠার সমান্তরাল রাস্তায় তুষার হেঁটেছেন
একা;খাদের ধারে গিয়ে ঝুঁকে দেখেছেন নিজেরই ভারাতুর শেকড়গুলো , যেন ‘উচ্চতম ট্রাপিজে ডিগবাজি খাওয়া এক ক্লাউন’ যিনি
এস্টাবিলিশমেন্টের নামাবলী লুকিয়ে আসেননি, আসেননি আত্মা বিক্রি করে,আর অভিমানে
ছিঁড়ে ফেলছেন কাঁচা ব্যান্ডেজ কেবল এক চরম অভিমান এক ভয়ানক তৃষ্ণা নিয়ে যেখানে এক
ট্রাক থেকে অন্য ট্রাকে ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে তুষার ছুটে চুলেছেন রাস্তার
প্রস্তাব নিয়ে রক্তের প্রস্তাব নিয়ে-কেবল ‘এই প্রিয়
দেশ যেন পুনর্বার বাসযোগ্য হয়’ । ষাটের আন্দোলিত আক্রান্ত বাংলা
কবিতা বাজারে তুষার যেন অবলুপ্ত আবহাওয়ায় এক তামাটে আবিষ্কার ;যিনি শরীরের সব
গ্যাস তেজস্ক্রিয় গিলে নিয়েছেন , শীততাপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষার আসনে তার
শিল্পপিয়াস নয় বরং ঠাসা মানুষ আর ফাঁপা
মানুষই হয়ে উঠেছে তার যাবতীয় নেশার অধীন ।অজয় নাগ, তুষার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে
তুষার রায়ের এক অদ্ভুত খেলার শখের কথা উল্লেখ করেছেন ।“খেলাটা ভারী মজার, রাস্তার সিগন্যাল না মেনে চলন্ত গাড়ীর গতিকে ফাঁকি দিয়ে
ফুটপাত বদল করার,যেন এক জীবন পার হয়ে অন্য জীবনে যাওয়া। এতে যে কোনো সময় মৃত্যু
আসতে পারে । …তুষার বলতেন, মৃত্যু নয় জীবনের খেলা।“ শেষের দিকের কবিতায় কোথাও জীবনকে নতুন করে শুরু করার ইংগীত পাওয়া গেলেও তুষার কি
সত্যিই নতুন জীবনের প্রত্যাশী ছিলেন? আত্মহননই কি ছিল না তার ইহজীবনের অভিভাবক!
দুঃখের সময় হাসতে চেয়েছিলনে তুষার, অভিকর্ষহীনতায় ভাসতে চেয়েছিলেন, কোনো রিসোলিং
বা কুহুরবে কম্যুনিকেট নয় বরং ব্রম্ভাণ্ডের চৈতন্য সুতোয় তিনি ছিলেন সেই মুক্ত
ধ্বংসপ্রেমী গ্ল্যাডিয়েটর যিনি ভারসাম্যবিচলিত মানডেন সমাজের মধ্যবর্তী শূন্যতায়
দাঁড়িয়ে, দু হাজার সাবমেশিন গানের সামনে
দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠতে পেরেছিলেন ‘ট্রেটার’ ‘ট্রেটার’ শব্দে।পৃথিবীর বিপনিতে কুঁচো
কুঁচো হয়ে উড়ে বেড়ায় অভিমানী তুষারের ‘স্বল্প
সোডা মেশানো মদের মত অন্ধকার’ আর বারবার শুনিয়ে যায় শেষপর্যন্ত
না সারা এক অসুখ,শুনিয়ে যায়-“গনগনে আঁচের মধ্যে শুয়ে এই
শিখার/রুমাল নাড়ছি/নিভে গেলে ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেন/ পাপ ছিল কিনা “।ঠিকানাবিহীন অসংখ্য ফুটপাতের কোন এক ফুটপাতে আমরা যে ব্যান্ডমাস্টারকে দেখি,
সামাজিক স্বত্তা জগৎস্থিত স্বত্তাকে চাঁদের আলোয় পুড়িয়ে দেওয়া যে তুষারকে বাংলা
কবিতা দেখে সে আসলে জমিদারের রক্ত নিয়ে জন্মানো, পলেস্তারা
খসা,ভগ্নপ্রায়,পরিচর্যাহীন জমিদারের এক বংশধর, সেই তুষার যে অভিভাবকের যত্ন
স্নেহের জন্য আকুল আর এই তীব্র দহন আর অস্বস্তিকর ডিলেম্মা থেকেই উঠে আসতে দেখি
আরও এক তুষার,অনিয়ম অনাচার আর বাউণ্ডুলে তুষার, যে তার নিজের সমাধি ফলকের জন্যও
কবিতা রেখে যান- “সেই কবি শুয়ে আছে এইখানে/তিনটি বুলেট বুকে নিয়ে শুয়ে, আছে
এইখানে/সেই কবি মিছিলের ঠিক পুরোভাগে ছিলো/তিনটি বুলেট তাকে শুইয়ে রাখেনি,
জেনো,/ভালেরির মতন ফিরছে সেই কবি; ফিরে এসে/তিনটি বুলেটে ঠিক মৃত্যুকে কিনে শুয়ে
আছে ।“ ষাটের উন্মত্ত
ক্রান্তি থেকে সত্তরের অগ্নিগর্ভতা-এই পুরো সময়টাই তুষারকে সেই ফ্যাকাশে জীবনের
সামনে আত্মজিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় যেখান থেকে তিনি ক্রমাগত এক ‘মৃত্যুশিল্পী’ হতে চেয়েছেন,সমগ্রের এক খণ্ড নয় বরং অনুসরন করতে চেয়েছেন
সেই ল্যম্পপোস্টটিকেও যেখানে তাকেই তোলা হবে অনন্ত যীশু হিসেবে; অজানা আঁধারে
ক্রমশ গেঁজে ওঠা এক কবি, জ্যামুক্ত তীরের মত সরের গভীর থেকে উঠে আসা এক কবি তুষার;
অজয় নাগের কথাতে,-“ আমার
জানা নেই-কোন কবি তুষার রায়ের মতো মৃত্যু-জলে নিজস্ব শব্দ ধুয়ে রচনা করেছেন কবিতা।
কবিজীবন। তুষার রায়ের শরীর ও আচরনের প্রতিটা অভিঘাত মৃত্যুর প্রামান্য প্রতিমায়
তীক্ষ্ণ চোখ ফুটিয়ে দেয়। যা আমাদের ভীত ও আলোকিত করে একই সঙ্গে। ভীত হওয়ার কারন
মানবজাতির সমাজ অনুশাসন বিধিবাধ্যতা ও কবির প্রতি ভালোবাসা(নাকি দয়া!) ; আলোকিত
হওয়ার কারন কবির শাব্দিক দৃঢ়তায় নিজস্ব পথ-খননের-বিশ্বাস-নিষ্ঠা ।তুষার রায় তার
সমসময়ে কতটা উপযোগী সে সম্পর্কে কালচক্রের আর্বতে ভিন্নমত স্বাভাবিক, কিন্তু তার
এই নাতিদীর্ঘ অনুশাসনহীন প্রলাপক্রান্ত মায়াময় তরুন বিবাগী কবিজীবন ভাঙা মাঠেও
হেঁটে যায় দুর্দম কয়েদীর কল্পনা নিয়ে , সে যেন ফের গজাবেই ফের বিক্ষোভকারী হবে ফের
সব কিছু ভেঙে ,দুঃখকে শিশি ভাঙা গদের আঠার মত ফেলে দিয়ে অজস্র স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে
উঠে আসবে নিষিদ্ধ কারাগারে যার দীর্ঘ লাফ আমরা হয়ত লক্ষ্য করব না অথবা নিকেল খসিয়ে
নগরী উড়বে তারই প্রিয় ফানুসে।কোনো এক গোপন জবাবদিহিতে আমরাও কি হয়ে উঠব এক একজন
সন্দীপন!’ঘুমের
মধ্যে মাথার একটি শিরা ছিঁড়ে গেলে’ অন্ধবুকে লিখে রাখব-“ তারপর সারাদিন আর কিছু আসে না।রাতে আসে তুষার। মধ্যরাতে
বেল বেজে যেতে থাকে অবিশ্বাস্য একটানা। মানুষে এভাবেও বেল দেয়?...দরজা হা হা খোলা।
দরোজার ফ্রেমে তালু উলটে লিকলিকে দু হাত কাঁধের দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে অজানা
দেবমূর্তির মতো সে দাঁড়িয়ে। দু হাতে দুটি ভারি পাথরের চাঁই । গায়ে চিকনের কাজ করা
গুরু পাঞ্জাবি।ব্যস, আর কিছু নেই। ………পুরুষ শীতলা ?
শুধুই
তুষার ঝরছে
সকলেই নেমে যায় নীচে
বিখ্যাত পাকদণ্ডী রেলপথ বেয়ে
শীতের মেঘলা দিনে ছেড়ে
দার্জিলিং
কোলাহল শান্ত, শুধু
গোম্ফার ডং ডিং ঘন্টাধ্বনি বাজে
আর তুহিন বাতাসে ভাসে
তুষার ও হিম, সুরেখা
আমি ও নিখিল শুধু রহে গেছি
মুনলাইট গ্রোভে
স্টোভে শুধু কেটলির সোঁ
সোঁ শব্দ নীলগিরি কফি
টেবিলে স্টিল লাইফ ওল্ড
মঙ্ক রামের বোতল
ফায়ার প্লেসের কাঁপা কাঠের
আগুনে কাঁপছে
হাইলাইট বোতল ও গ্লাস
সাপঘুম ইচ্ছে করে
দীর্ঘবেলা ধরে, চলো তবে
পরস্পর তিনজনে শুই- আমি ও
নিখিলের মধ্যে
স্যান্ডউইচ সুরেখা সান্যাল
এরকমই শর্ত ছিল আমাদের-
আছে , বা থাকবে
ঘুমের ভেতরে হবে
বৃষ্টিপাত, তুষার ঝরবে ফার
পাইনের বনের ওপর- তুহিন
শীতের রাত ক্রমান্বয়ে
আরো হিম
হবে, আর
আচম্ববিতে ঘুম ভেঙে গেলে
দেখি কেউ নেই নিখিল বা
সুরেখা
সান্যাল , শুধু জং
বাহাদুর কফির পেয়ালা হাতে,
আর ডিং ডং
ঘণ্টার শব্দ শুধু ভেসে
আসছে তিব্বতী গোম্ফার,
ব্যস আর কেউ নেই, কিছু নেই
শুধুই তুষার, শুধু
ধূ ধূ প্রান্তরে বনের
কেবলই তুষার ঝরছে, শুধুই তুষার
দেখে
নেবেন
বিদায়
বন্ধুগন, গনগনে আঁচের মধ্যে
শুয়ে এই
শিখার রুমাল নাড়া নিভে গেলে
ছাই
ঘেঁটে দেখে নেবেন পাপ ছিল কিনা ।
এখন আমার
কোন কষ্ট নেই, কেননা আমি
জেনে
গিয়েছি দেহ মানে কিছু অনিবার্য পরম্পরা
দেহ কখনো
প্রদীপ সলতে ঠাকুর ঘর
তবু
তোমরা বিশ্বাস করো নি
বার বার
বুক চিরে দেখিয়েছি প্রেম, বার বার
পেশী
অ্যানাটমী শিরাতন্তু দেখাতে মশায়
আমি
গেঞ্জি খোলার মতো খুলেছি চামড়া
নিজেই শরীর থেকে টেনে
তারপর
হার মেনে বিদায় বন্ধুগন,
গনগনে
আঁচের মধ্যে শুয়ে এই শিখার
রুমাল নাড়ছি
নিভে
গেলে ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেন
পাপ ছিল কিনা ।
কবিতাই ক্রমশ
কবিতা লিখতে আজকাল প্রথমাংশ থেকেই ভয়,-
কেননা প্রত্যেকটা লাইন পংক্তি আপনি ভাঙছে বিভাজনে
অনুঘটন ও সমান তালে শক্তির যেন শ্যাফট খুলে যাচ্ছে
কবিতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাপার দাঁড়াচ্ছে বিস্ফোরকের হাতল
আকর্ণ আতা দাঁত বের করে রোমান্টিক হতে গেলে
দন্ত পংক্তি ঝরে যাচ্ছে
নেশা জমাতে গেলেই কবিতা ব্যুমেরাং যেন অস্ত্র, কিংবা
সোনা সাফ করতে এ্যাসিড যেমন মারাত্মক ধোঁয়া বেরোয়
যেন দেহ গান ঘ্রান রক্তমাংসে পুড়ে উঠছে ধোঁয়া এমন
সিপিয়া রঙ তার,
কবিতাই ক্রমশ গঙ্গার মতো সাফ করছে ময়লা কালো,
ঝুল যত ফেঁশো পাট কাটি, কবিতাই তখন গঙ্গার মতো
তর্পন করাচ্ছে তীরে এবং
ডুব দিয়ে উঠলেই মনে হচ্ছে মন্দির দেখবো সামনে, কিন্তু
চোখ খুলতেই ঝলসে উঠল মড়ার পেটে কাক যাচ্ছে ভেসে এবং
ড্রেজার ঝন ঝন বেজে কাজ চলেছে ভড় নৌকো খড়ের গাদায়
রণরণ করছে রোদ
আবার ডুবছি ভয়ে ভাবছি এবার মাথা ভাসালেই
দেখতে পাবো নিজের শরীর ভেসে যাচ্ছে, সোনা গলান
রোদ ফুটেছে সিপিয়া রঙ গঙ্গা যেন এ্যাসিড হয়ে ফুটে উঠেছে
গাঢ় বাদামী বিষাদ ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে ব্রিজ।
ব্যাণ্ডমাস্টার
আমি অঙ্ক
কষতে পারি ম্যাজিক
লুকিয়ে চক ও ডাস্টার
কেননা
ভারি ধুন্ধুমার ট্রাম্পেটবাদক ব্যাণ্ডমাস্টার,
তখন
প্রোগ্রাম হয়নি শুরু- সারা টেম্পল নাম্নী ক্যাবারিনা
তখন এমনি
বসে ডায়াসের কোণে,
আমি
ড্রামে কাঠি দেওয়ামাত্র ওর শরীর ওঠে দুলে,
ড্রিরি-
ড্রাঁও স্ট্রোকেতে দেখি বন্যা জাগে চুলে,
তিন
নম্বর স্ট্রোকের সঙ্গে নিতম্বতে ঢেউ
চার
নম্বর স্ট্রোকেতে ঝঞ্ঝা ওঠে গাউনের ফীলে,
নম্বর
পাঁচে শরীর আলগা, বুকের বাঁধন ঢিলে,
আম তখন
ড্রাম বাজিয়ে নাচাই ওকে
মারি এবং
বাঁচাই ওকে,
ড্রামের কাঠির স্ট্রোকে
স্ট্রোকে
যেন
গালাই , এবং ঢালাই করি
শক্ত ধাতু নরম
করার কাস্টার,
কেননা
ভারি ধুন্ধুমার ট্রাম্পেট বাদক গ্র্যাণ্ডমাস্টার,
আবার
বাজাই যখন স্যাক্স চেলো
ক্যাবারিনার
এলোমেলো
ডিভাইস এ দ্বন্ধ
এলো
আমার
বাঁশির সুরের সুতোয়
দেহের ফুলে মালা
ট্রা
রালা লি রালা লা
ঠিক চাবি
হাতে দেখি খুলে যায় তালা।
আমি বাঘ
আপনাদের
পোষা বেড়াল বাচ্ছাদের সঙ্গে বাড়তে বাড়তে
মিউ মিউ
ডাকের মধ্যে গর্জন করে উঠেছি
হলুদ
শরীরে ক্রমশ স্পষ্ট কালো রেখাগুলোই বলে দিচ্ছে-
তুমি
বেড়াল নও, তুমি বাঘ,
ট্রাপিজ
ও ক্লাউনদের খেলা শেষে জাল ঢাকা এরেনায়
আমি আমার
অসম্ভব রাগ ও রোয়াব নিয়ে গর্জন করবো,
আর তোমার
চাবুকে ও শক-এ
নিয়ন্ত্রিত খেলা দেখাব
তোমাকেই
শুধু মানবো রিংমাস্টার।
চাবি
প্রতিটি
তালার কাছে আপন চাবির কথা ভাবি
প্রতিটি
পাতায় যেন আশা করা মহৎ কবিতা
এভাবেই
ভালোবাসা প্রতিটি পাথর ছুঁয়ে ছুঁয়ে
চালভূঁয়ে
এরকমই মেনে যেতে যেতে তুমি
রহস্যের
কোন গূঢ় কথা বলেছিলে- তবু দেখি
প্রতিটি
শিকল আজও অটুটই আছে, আর
প্রত্যেক
বিকেল রোজ নিকেল কে মুছে দিন
ডুবে যায়
সন্ধ্যার বাদামি আঁধারে- দেখি
তখন বাঁ
ধারে কিংবা ডানদিকে কোনো
দরোজা কি
আছে কিনা ভাবতে ভাবতে আমি
প্রতিটি
তালার কাছে আপন চাবির কথা ভাবি ।
গোধূলি
কেই বা
আগেতে ছিলো কেই বা পিছনে
এসব
প্রশ্ন যতো অবাস্তব ভেবে
চির পাইনের সারি
পাতায় পাতায় শুনে হেসে
ওঠে
হাওয়া,
হাওয়া ওঠে ঘুলিয়ে উঠেছে লাল ধূলো
পূবের
হাওয়ায় দূর ধান ক্ষেতে মহিষ ও গরুগুলো
এরকমই উজ্জ্বল বিকেলে ভাবে
খোল ভূষি খড় মাথা গন্ধের
বাথান
অথবা সে
গভীর দুপুরে নেমে গহীন সে ঝিলে
নাকি
ভাসিয়ে আধো হাওয়া জলের মধ্যে নাকি
মহিষ
দেখতে পায় গভীর মহিষ নাকি সেইখানে
ভূত, ভয়
পেয়ে ছুটে চলে আসে
ফিরে আসে গরু মোষ এই পথ
লাল ধূলো
মিশে যায় মহিষের গায়ের রঙের
মতো গাঢ় সন্ধ্যায়।
আনুপুঙ্খ
আমি আর আনুপুঙ্খে যেতে চাই না ইদানীং
আমি একটু স্বাদ ও সম্পৃক্তির মধ্যবর্তী শর্টওয়েভে
কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রাতিগ মূর্তি থেকে বিমূর্তনে
এই নীল লাল ও হলুদ তাপ সংবহনে
পরস্পরা নিয়তই ভেঙে ভেঙে ত্রিডবল
ছয়গুন, বারো ও চল্লিশ থেকে লাফ
দিতে ক্রমশই
আরোহাবরোহনের নঙর্থক হৃদি
যদিদং হৃদয়ং বলতে ফেটে যাব
লাল নীল হলুদের থেকে ইনফ্রারেডে
এ কথায় কেমন বোঝানো গেল সেই
রাগত সংশ্লেষ
এই ট্রেন থেকে আমি অতএব নেমে
চলে যাব বনান্তরে- ক্রমশ গভীর ওই বনে
গিয়ে ওই বাঘিনীর রোমশ শরীর
মেখে শোবো।
হাসপাতালের কবিতা
-১-
হাসপাতাল
ভালো লাগে না।
ডেটল
ওষুধ হাওয়াকে আসতে দেয় না।
সিস্টার
ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিন,
বাইরে
থেকে ঘুরে আসব-
খুব দূরে
নয় নদীর কাছে- কাছাকাছি
চলাচলের
রাস্তার পাশে
প্রতিদিন
যেখানে মানুষেরা কাঁদে হাসে
সেতুর ওপর
ছায়া- সান্ত্বনা
তার তলায়
আমি কিছুক্ষন বসব
সিস্টার
আমায় নিয়ে যান
যেখানে
দিনের শুরু।
হাসপাতালের কবিতা
-৩-
রাত্রি গভীর হয়ে আসে
রাত্রি ভারী হয়ে আসে চোখের পাতায়।
রাত্রি কী কালো
এমন কালো রাত্রি দেখিনি কোনো দিন।
সিস্টার, সব আলো জ্বেলে রাখুন
এখন আমি ঘুমাব।
আবার কবিতা লিখব
নতুন কবিতা
একটা কবিতা লেখার আগে
কিছুক্ষন
ঘুমাব।
আবার কবিতা লিখব
পুরোনো কবিতা শেষ হলে।
হাসপাতালের কবিতা
-৭-
মাঝে
মাঝে উদাসীন খুব সারাদিন
মাঝে
মাঝে অভিমানী রাগ হয়
মৃত্যুর ওপর
আসছি
এখনি বলে চলে গেছে সে ঘুর পথে
বসে বসে
বেলা যায় তার রেখে যাওয়া
ছাতার তলায়
একদিন
আসবে রাতে
যখন
থাকবো গভীর ঘুমে।
হাসপাতালের কবিতা
-১০-
এইবার
গোড়া থেকে শুরু করব জীবন
এইবার
জীবনকে পাটে পাটে সাজাব
অনেকদিন
তার দিকে ফিরে দেখিনি
তার
বায়নাক্কার পাত্তা দিইনি
তাচ্ছিল্য করেছি অনেক
চোখের
জলের দাগ মুছিয়ে দিইনি
তাই তার
এই প্রতিশোধ-
একা একা
দিন গোনা
এইবার
জীবনকে অতি সযত্নে সাজাব
ঘুম-হাসপাতালের থেকে বেরিয়ে
আমাকে
আরো একবার সুযোগ দাও হে নাথ।
গতি
এক অদ্ভুত আচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে হঠাৎ হরিণ
তড়াং লাফিয়ে গেলে নিঃসঙ্গ চোখের সামনে
খুলে যায় প্রত্যেক জানলা-
সিঁড়ির পর সিঁড়ি
বিপরীতে তীব্র ছোটে বিমানের
তলায় রানওয়ে
সেইখানে তবে পৌঁছনো যাবে ভাবতে বুক
বুকের মধ্যে যন্ত্রপাতি রোম কূপে কূপে
আনন্দের তেলঘাম বেরিয়ে আসে দেখি
এইবার
গুড়ি
মেরে বসে থাকার মতো এতোদিন
হেঁটেছি জীবন
এইবার,
এইবার ফিটফাট লাফ দেবো ভাবি
ঝাঁ
চকচকে শরীরে, ভঙ্গিতে ঠিকঠাক এইবার
সব চাকা
যায়, ফিরে আসে ফের আমি
ত্রিকোন
সাধের দিকে চেয়ে বলি ফেরো
নয়তো
স্থির থাকো মধ্যযামে চাঁদমারী
হে জীবন,
গুড়ি মেরে এতোদিন থেকেছি বসে
এইবার,
এইবার ফিটফাট লাফ দেবো ভাবি
গম্ভীর
চেয়ারে বসে, আঙুলে কফির কাপ
সামনের
জানলায় প্রেশারকুকারের শোঁ শুনতে
গুনতে
সাত পাঁচ আঠারো বাইশ এইবার
উনুন
উলটে কেটলির মতো উত্তাপে শাসিয়ে
পৃথিবীকে
হাসিয়ে ভালোবাসিয়ে নেবো আমি।
ভালোবাসা ঃ দুই
আমায়
অপমান করে যে লোকটা
তাকেও আমি ভালোবাসি
এ ভাবেই
ভালোবাসতে বাসতে
অপমান
করি নিজেকে, তোমাকে , এবং
ভালোবাসাকে
এ ভাবেই
ভালোবাসা পেয়ে যায়
ভুলভাল
শত্রুমিত্র থেকে
শূন্য কলসী এবং ঘুঘু
যে লোকটা
কাঠের ক্রুশ তৈরি করছে
অথবা
যারা বানাচ্ছে পেরেক আমার জন্য
তাদের
দিকে তাকিয়ে জানতে পারি
আমিই সেই
যিশু কিংবা কালোবাজারী
যাকে
ঝোলানো হবে নিকটবর্তী ল্যাম্পপোস্টে
তখন আমি
ভালোবাসতে শুরু করি ল্যাম্পপোস্টকেও ।
********************************