আমিও কি আমার লেখায় আজও ঠিক উচ্চারন
করতে পারছি? উচিতে খণ্ড ত দিই নাই, তবু যা নির্ভুল
বলতে পারছি কই? যা আমার ভাষা, এখনো তা দৈববানী,
শূন্য থেকে দয়া হলে হঠাৎ হঠাৎ ঝরে...
রমেন্দ্রকুমার ছিলেন
পারফেকশনিস্ট, দীর্ঘজীবনে কবিতাকে নিয়ে ছিল তাঁর সন্ধিৎসু কাটাকুটি, অক্ষরচিত্রে
চির খুঁতখুঁতে-দীর্ঘসূত্রী, বারবার নিজেকে বোঝানো মহাতীর্থে না পৌঁছবার কথা; রমেন্দ্রকুমারের
শব্দজগত এমনই-প্রাকৃত থেকে নিরবধিকালের; ৮৭ বছরের পরিচর্যাহীন অজ্ঞাতবাসের জীবনে ১৯৬১
তে ‘আরশিনগর’ আর ১৯৮৫ তে ‘ব্রম্ভ ও পুঁথির মউরি’; মাঝে চব্বিশ বছরের
চিরছায়ারৌদ্রে গুহাচরের আনন্দশরীর নিয়ে ঘুরে বেড়ানো লোকাচরের পয়স্বিনী শাপলাবনে
,বপপীহা পাখির সাথে প্রানবায়ু নেড়েচেড়ে দেখা, খুঁজে ফেরা অজ্ঞাত ও রহস্যময় কোনও
প্রেরনার একটি প্রানবন্ত ফুঁয়ে অভিষিক্ত সেই নিগূঢ় সৃষ্টি, কবিরতার সৌরভ-কবিতার
অন্তঃসার-যেন নেশা করা শব্দের কাহার-বীণা; আসলে একটি শব্দান্তরসাধ্য ব্যাচার্থই
ছিল রমেন্দ্রকুমারের নির্জন তপস্যায়, উচ্চগ্রাম নয়, তাঁর পরিকল্পনা, ভাষ্য ও
বিন্যাসে কেবল একটু মাছের ঘাই, কেবল একটু পিতুলে শেওলা , নিবিষ্টতা মাপতে মাপতে এমনই
তাঁর বিশুদ্ধ সংগীত, ব্রম্ভ ও পুঁথির ঠুকঠাক কুটিশিল্প; পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতার
কাছে চিত্রকল্প খুঁজে গেলেন রমেন্দ্রকুমার; ফসলের জন্য বুননের জন্য কাঁধে ঝোলা এক
কবি শব্দের স্বাস্থ্যকে রেখে এলেন কড়ুই গাছের ডালে;হ্যাঁ, শব্দ ; তাঁর যৌগিক
বীক্ষায় শব্দের শতকান্তি বিচ্ছুরন, তাকে কি জীবনশিল্পী বলা যাবে
নাকি কাদামাটির মাংসের থেকেই তিনি বেছে নিলেন সেই অর্মত্যের ইশারা, সেই অদৃশ্য
ওষধির মূল ! রমেন্দ্রকুমারের কবিতা কর্মফলের প্রত্যাশী নয়, গহনে
ধ্বনিত হতে থাকে তাঁর পরীক্ষা তাঁর আত্মিক বীজটি বিরোধিতাটি, পুষ্ট ও পরিবর্ধিত
হতে থাকে সেই রহস্যময় পরম-কখনো কখনো তাকে মনে হতে পারে প্রলাপ কখনও বা প্রতীক,
ফুল-ফল-পাতায়-শাখায় বিকশিত বিধৃত তাঁর কবিতার শুরু মাধুর্যে আর সমাপ্তি চৈতন্যে। ‘ব্রম্ভ ও
পুঁথির মউরির’ মুখবন্ধে লিখলেন-‘কবিতা একটি কল্পকাহিনি। তার কথক
উত্তমপুরুষ হলেও কবির সংগে একাত্ম করলে ভুল হবে...এই কথক-আধুনিক সমালোচনার ভাষায়
পার্সোনা বা মুখোশ-কবিতার কল্পকাহিনীর শিল্পিক প্রয়োজনে, একটি বিশেষ অবস্থায়
ভূমিকা গ্রহনের জন্য, উদ্ভাবিত কাল্পনিক চরিত্র । স্বপ্নমূর্তি গোপনচারী কবিকে
তাঁর জীবনচরিতে পাওয়া যায়না। ঠিক কথা।
কিন্তু জীবনচরিতের মানুষটিকেও কি কবিতায় পাওয়া যায়?...শিল্পকর্মে সৃষ্ট
চরিত্রগুলির নেপথ্যে থাকে অন্য একটি কন্ঠস্বর-স্পষ্ট,অর্ধস্ফুট ও অশ্রুত ” -কিন্তু সত্যিই কি তাঁরা আত্মভাবনাকে ব্যক্ত
করেনা রমেন্দ্রকুমারে বোধি-স্বজ্ঞা-সৃষ্টির উল্লাস ! তিনি যখন লেখেন –“দূরে ঐ
তামার চৌয়ারি/ অনেক গাছের ভীড়ে চালটুকু জেগে আছে/লাল, অস্তগামী; কদমের উঁচু
ডালে/একটা চিলেঘুড়ি, যেন নীল রুহিতন ব্রোচ, পাতায় আটকানো/ একসারি পামগাছ-গুঁড়ির
বোতলে উপচে পড়ে প্রানরস/ পুকুরের পাড়ে একা লোলচর্ম প্রাচীন বকুল/ আমাদের
পূর্বপুরুষ, জলে, মুখ দেখছে- সে কি বালারুন/ক্রেতা যুগ বেঁচে ছিলো ?”-তখন তো
পূব বাংলায় ফেলে আসা তাঁর মুক্তাগাছার বর্হিবাটিই পরোৎকর্ষবাদী রমেন্দ্রকুমারের
আরশিনগর হয়ে ওঠে। আসলে রমেন্দ্রকুমার তাঁর অবলোকনেই অজান্তেই এলিয়টের মত সেই one
poem বা এক কবিতাতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন,
যেখানে তাঁর জন্মের ইতিহাসও প্রতীক অরন্যে অলংকিত তীর হয়ে উঠেছে, স্মরনীয় পংক্তি
হয়ে উঠেছে ।ব্যজোক্তির আদলে তাঁর কবিতারশরীরের আনাচা কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ‘আমি’;সে ‘আমি’ চিত্রকল্পের, অচিনপুরের,
সে ‘আমি’ নদী-কাশফুল আর কৃষ্ণসারের
অখণ্ড স্বরূপে স্বেচ্ছায় চুরমার হয়ে থাকে, সে ‘আমি’ জড়াজড়ি করে পড়ে থাকে অজস্র কেন্নোর
মত, অপ্রাপনীয়ার সোনালী স্তনের মত; বীজ থেকে একটি জীবন নিয়ে রমেন্দ্রকুমার খুঁজতে
গিয়েছেন সেই বদ্ধ পাগলটিকে যে ব্যথা বোঝেনা আনন্দ বোঝেনা, চিরজীবতের মত মুক্তি তার
নিরন্তর, রূপদক্ষ বটের বাকল ধরে ধরে সে
পেরিয়ে চলেছে একটি নিজস্ব সাঁকো যা আসলে স্বত্তার দেহলগ্ন হৃদয়লগ্ন; তার দাবী
সিঁধেল চোর হয়ে উৎসুক মনের কাছে বমালসুদ্ধ ধরা পড়ার আবার ব্রম্ভজ্ঞান নিয়ে অর্ধেক
চোখ বুঝে ফুসমন্তর হওয়ার; ‘চৌষট্টি পাপড়ির পদ্ম’ কবিতায় হাওয়ার জানলা খুলে দেন রমেন্দ্রকুমার-“ গুপ্তধর্ম জানুন, বুঝবেন কার জন্য মানবজীবন
।/লক্ষ্মীট্যারা একটি মেয়ে আপনাকে যা দিতে পারে তার চেয়ে দামী/ কোহিনূর আবিষ্কৃত
হয় নাই বুঝবেন আজও ভূভারতে”…তাঁর নিজস্ব বাগান কিছু
ফলমূল আর আনাজ কুড়ীয়ে লোকায়ত কামধেনু নিয়ে এক স্বর্ণগর্ভ সৃজনের অনিত্যধারনার দিকে
অনুপ্রবেশ করছে ব্যক্তি রমেন্দ্রকুমার আবার নিষ্পল পরমাআত্মার ব্যাখা চেয়ে ‘বোতাম’ কবিতায় উচ্চারিত
হচ্ছে-“ আমি
সমস্ত দেওয়াল হাতড়াচ্ছি/ কোথায় লুকোনো
দরজা?/…পাগলের
মত পরপর এক একটি/ সাজানো বোতাম, টিপে যাই; ধর্ম…বিজ্ঞান…শিল্প…সপ্তাশ্ব… কল্পনা… /কিন্তু গুপ্তঘর খুলছে না” ।আসলে রক্তমাংসময় লিবিডো
থেকে রমেন্দ্রকুমার দুঃসাহস দেখিয়েছেন একটি মশাল জ্বালার, যা দিয়ে দেখা যাবে
চিরচঞ্চল ঘূর্ণির অন্ধরমহল, বৃহত্তর সত্যের উল্লাস; নিঃসঙ্গ সাধকের মত শব্দের
সলিলে ধাতস্থ হ হওয়াই ছিল তাঁর মোহ, তাঁর
মূর্ত্য মৌল-পরমকে ধরে ফেলেছিলেন তিনি জ্ঞানের কণা খুঁটে খুঁটে, তিরিশের কবিতা যে
নতুন কাব্যভাষা পায় যা রবীন্দ্রনাথের থেকে নতুন সেখানেও কিন্তু ক্ষয়প্রাপ্ত হতে
চাননি, অকপ্ট ঋনস্বীকার করেছেন রবীন্দ্রনাথ, বড়ু চণ্ডীদাস বা মধূসূদনের মত
চিরকালীন আশ্রয়গুলোকে আর তা থেকেই কালি আর মধুতে মিশে উঠে এসেছে তাঁর নতুন শব্দ ,সহজাত
কবিত্বকুণ্ডলে বুরুজ তুলেছে এক অন্য গোলার্ধের হায়রোগ্লিফ ;প্রজ্ঞার প্রাসাদে
আরোহন করে প্রাকৃত মানুষকে দেখাই যেন তাঁর সত্যের নানা কাচ নানা সাজ; আর তাকেই তিনি দেখেছেন পার্থিব পইঠা ঠেলে ঠেলে,তাঁর
নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেই প্রতিভাস হয়ে ওঠে চেতনার দ্রাক্ষাপুঞ্জে এক সন্ধানী সাধকের
নিঃশ্বাসবায়ু, স্ব-রাগ স্বাক্ষর-“ ‘মাংসভক্ষন
ও ফাসুকা’ থেকে
ফাঁসিকাঠ পর্যন্ত সমস্তই কবির কাছে বিস্ময় ও বেদনার বিষয় । কিন্তু মুক্তির উপায়
তিনি জানেন না- সমাধান আজ তাঁর হাতে নেই । তিনি বড়জোর চমকে দিতে পারেন; সেটুকুও
অবশ্য ফাউ,অধিকিন্তু এমনকি কবিতায় অক্ষমতা অনুভব করে আর্তকন্ঠে তিনি বলতেও পারেন-
আমি পারছি না। এই পর্যন্ত।…… তাঁর দৃষ্টিতে কখনও থাকে ঈষৎ কৌতুক, কখনও মুগ্ধতা বা মিশ্র অনুভূতি ও
দ্ব্যর্থকতা- যার ফলে তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে জটিল ও ঋদ্ধ;… তাকেই তিনি সর্বত্র মুগ্ধ
বিস্ময়ে দেখেন ।“ রমেন্দ্রকুমার
সেই সদগুরু, থাবায় নখ লুকিয়ে তাঁর কবিতাজন্মে বসে ছিলেন লুকিয়ে ওত পেতে মধু থেকে
সেই মক্ষিকা সেই মহা অবসানকে তুলে নিতে; ছাড়ানোর কৌশল জানতে চেয়েও আঁকড়ে ধরতে
চেয়েছেন,বীজ থেকে গাছ না ফলিয়ে ফিরতে চাননি।আর তাই অকৃতদার রমেন্দ্রকুমার
শুক্লা তিথিতে বুদবুদের আকারে
চৌকো ঘাসের আকারে নির্সগে ধাতুতে ফেরার আগে গেঁথে গেলেন তাঁরই ‘জীবনচরিত”-
………”১৯২২ এ জন্ম। শুক্লা তিথি । রেখে গিয়েছেন
শুধু
কয়েকটি কবিতা- তারাই সন্তান ;
তারাই
আগুন দেবে মুখ—আর কিছু চাওয়া পাওয়া নেই?
সামান্যই-
একজন বন্ধুর প্রীতি, দুজন বান্ধবী ।
শখ
ছিল চুপচাপ দৃশ্য দেখবেন
(বাড়িতে
বিভিন্ন লোক , হৈচৈ , চেয়ার-সরানো)
চিলেকুঠুরিতে
বসে ; পোলট্রি করে,
অথবা
বাগান নিয়ে সন্ধ্যা কাটাবেন ।.........”
পিন ছয়
শূন্য
আমবাগান ফেলে যাবো। আরশি
নগর ;
কাচঘেরা ঘরদোর- ফেলে ,
কোথা যাবো?
ঘটের আকার গ্রিল- তুমি ঘট
হয়ে থাকো
একশো বছর, ততক্ষনে আমি
ছাই।
কাউকে কি কেউ
ঘরে সাঁধ করিয়ে দিলো?
একদিন রওনা দেবো-
চকীচকীচকী
বোঁচকাবুঁচকি কিছু নেই,
নগ্ন হয়ে যাবো,
এই তীক্ষ্ণ
চোখজিভনাক-কিছুই না
আমি যাবো সাত শূন্য শূন্য
শূন্য চার শূন্য থেকে
ঘড়িহীন ছয় শূন্য পূর্ণের
শহরে।
অমঙ্গল
একটা
মশাল জ্বালি।
বিশাল
নদী পড়ে থাকে অন্ধকারে চুপ-
পাড়ের কাছে
একটি ঘর, ঘূর্ণিজল, একটু বন, মাছের ঘাই,
একটু
আলোকিত।
সূর্যের
খুব কাছে-কাছে ছোরাছুরির তীক্ষ্ণ ঝংকার।
উলুখড়ের
পর্দা ঠেলে শেয়াল গেলো, অমঙ্গল মুখ
বুঝতে
হলে একটি আলোকস্তম্ভ প্রয়োজন।
তবু ওকে
সরিয়ে দিতে হাত ওঠে না, অত বারুদ নেই,
আমি শুধু
মশাল তুলে চমকে দিতে চাই।
কুলগাছ
বরফচূড়ায় আমি দেখলাম বহ্নিমান পিনাকীর ঘর।
পর পর ঝর্নায় শ্রীপদের নুপুর শুনলাম...
কত মানুষের কথা, কত না কথার মাত্রা, সুরসার, টান টোন,
দীর্ঘ
সেই পথে-
সহযাত্রীদের সঙ্গে কটি অহোরাত্র কাটে, বন্ধু সব, চমৎকৃত আমি।
দেও দেখনি কোথায়? নদীটিও কই? ওদিকে কি? ঝিকমিক
যে খেলেছে লুকোচুরি এতক্ষন, কখনো অদৃশ্য থাকে,
কখনো বেরিয়ে আসে ফের
কিং কিং হেসে সকৌতুকে, ঐ! আধক্রোশ মাত্র দূরে নদীর গর্জনে
পাহাড় গমগম করে এখন বিকেল তিনটে, ঘড়িকেই যেন
পৌঁছে গেছি; উঁচুর প্রচুর ভয়, আমাদের বাস এসে নির্বিঘ্নেই থেমে যায়
বাজারের কাছে-
লোকমুখে ধ্বনি ওঠে ; জয়, বদ্রী বিশাল ! জয়, বদরী বিশালা!
তোমার ছায়ার নিচে রক্ষা দাও তুমি ।।
নাড়ী নক্ষত্র
তুমি কি
আমার নাড়ী বুঝতে পারো,
নক্ষত্রও
জানো ।
আলতো হাত
রেখে দপ দপ লাফানো কবজিতে-
এক
নিমেষেই বলে দাও, চারচক্ষু চর,
কে আমার
সমস্ত ছন্দের উৎস ;
যেন তার
পিতৃধাম, মাতৃকূল, নখাগ্রে নামটি!
বন্ধু এই
গবেষনা পণ্ডশ্রম জল্পনাই সার ।
বকনা
কোথায়? যুবতী কোথায়? অবৈধ কি?
যার
ঝিলিমিলি কাঁধ আর কেশর ধরতে পিছু পিছু ঘুরে মরছো ত্রিভূবন।
ভ্রুলতা
নাচিয়ে হাসো মেয়েদের মতো,
সবই
লিবিডোর খেলা। গুপ্তকাম গহন পাতালে।
সে কি
লুকিবিদ্যা জানে? গানে যার ভাঁজ পাই,
তাকে আমি
শনাক্ত করবোই। কী বিস্ময়!
কে এক
আগুনবতী, মেঘে আলো,পিঁড়ি পেতে বসে আছে । তুমি !
খুব
চেনা-চেনা লাগে। কাছে এসো, ভাপ নাও, দীপের উপরে করতলট উপুড়-
পূজা
শেষে দিই শান্তি জল তাকাও মুখের দিকে চেনো, প্রকাশেই শান্তি ।
ভূতপ্রেত
আসন টলিয়ে দিতে চায়, ভয় না, লোভ না, টলতে দিও না-
বাড়ি
যাও, মা আছেন তাঁর যোগ-সলতে জ্বেলে, ঘরের মধ্যেই ।।
কৃপা
আমি এক
কোণে-
মার খেয়ে
পড়ে আছি। সবাই আমাকে
দেখছে
আড়চোখে। মুখে দাগ, রক্ত
কপালের
শির
নীল হয়ে
ফুলে আছে।
আমি কেন উলটে মার
দিতে
পারছি না। এক-একবার
উঠতে
যাচ্ছি। সবাই তক্ষুনি একযোগে
‘শাবাশ’ ‘শাবাশ’ বলছে। আমি ফের
ঘাড়
এলিয়ে পড়ে যাচ্ছি। একটু দূরে
স্পষ্ট
বন্দুকের কুঁদো-
আমি ওটা ধরতে চাই,
ধরতে
পারছি না, সবাই তক্ষুনি একযোগে
‘শাবাশ’ ‘শাবাশ’ বলছে। আমি জনতার থেকে
আলাদা,
প্রায় নিরস্ত্র,
নদীতীরে পড়ে আছি।
দূরে খেঁড়ো ঘর
গোরু জাবনা খাচ্ছে।
আমি একটু
জল খেতে চাই-
লাঠিপেটা
হরিণের মতো সুমিষ্ট জলের দিকে
বুকের ভর
যেতে চাইছি।
শত্রু
খাড়া
বন্দুকটি চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে
আমি তার
ট্রাউজার, গামবুট দেখতে পাচ্ছি
আমার চারদিকে
দর্শকের
গুনাগুন। কেউ শিস দিচ্ছে
কেউ থুতু ফেলছে
কৃপা.....
আর
পারলাম না
গলা
ছিঁড়ে তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার
মুঠ
করছি। কে হারে
তখন
চাষার মেয়ে
ভিড় ঠেলে এসে,
হাতে তার
খণ্ড বিয়নী
একটা
ছুঁইয়ে বলল।
আমি না
দেবী, না অপ্সরী, দাও বীর্য
শুল্ক
দাও। শত্রু আকাশ থেকে আসেনি
ওটা
স্বপ্ন। তাকে খোঁজ । শুধু একটি বার দেখ
আমি
কেমন? আমাকে মনে ধরে কি না!
ভাঁজ করা ফ্ল্যাট দুজনের
ভাঁজ করা
একটাই ঘর; টান দিতে সাজন্ত বেরিয়ে আসে-
বেডরুম।
আর একটি টান দাও- গোপন খুপড়ি,
ডানদিকে
; রঙিন টেলিভিশান, হৃদয় চাঞ্চল্যকারী কিছু
স্বহস্তে
অঙ্কিত ছবি, সুক্ষ চোখে দেখ ঘোড়াদের কেশের নানান ধাঁচা,
টান দাও-
ডাইনিং হলে স্পর্শকাতর কোনটি।
ও হরিন।
চারটে তাকে বই ঠাসা, আল মাহমুদের নাম ঝল্কে ওঠে
এইবার ধীরে
সেখানেই
আমি আর চিত্রকর বন্ধু দিবা পাঁচ গতে,
অন্ন আর
পেয় নিয়ে চোখোচোখি বসি।
আড়ে
প্রায় দেড়হস্ত, দিঘে দিউ, নিচু এক লেখার টেবিলে,
থরে থরে
ষোলো পদ, ভোজ বিদ্যা কী ভাবে ধরায়,
অমন
সংক্ষেপে এত, ভগবান ! কে এ ভানুমতী।
শেষ
প্রস্থে ফলমূল, মিষ্টি, অস্ত যায় বেলা, জানলায় কার ঝিকিমিকি।
(ঠারে
হাসো কেন?) দীব্যমান যে দেবতা দূর স্বর্গলোক থেকে
সমস্ত দেখেন, তাঁকে
সাক্ষী
মানি- তিনিই বলুন, দুই গ্লাস পরিষ্কার জল কিনা।)
ঘরনী সে,
না অতি ঘরন্তী। সাজো শাড়ি পরে
বড়ি
দিতে, কাসন বানাতে, দাও
কে
দেখেছে তাঁকে? এমন নারীকে নিয়ে অপূর্ব নির্মানক্ষমা,
গৃহস্থালি
নাকি করে! ডিম্বাননা নিপুনা মালিনী,
সূত্রে
মণিগনাইব শব্দে শব্দে গাঁথে নর, বহুমূল্য মাথার টায়রা।
সুধা
ধবলিম ঘর, সুধা গৃহ, পার হয়ে সরু,
অন্ধকার
দরদালান, অবশেষে পৌঁছে যাই সুখোষ্ণ আশ্রয়ে।
আর আমি
দিব্যচোখে দেখলাম মানুষ বৎসরে
সুধা দিন
আসে, দোর খুলে চমৎকৃত লোকে; মাটির নিচের কক্ষে
বন্দী দিন কই!
গাছতলায়,
পথে, হর্ষধ্বনি, যেখানে যে , লোকসবে,
মাঠে,
নদীতীরে, বলছে ; কতযুগে করায়ত্ত করলাম,
মাধ্বী
ধেনু; পিঠা আর সুধা।
কথা শুনে
বিস্মিত অনেক বন্ধু; একি! জেগেই ঘুমোও কবি-
ক্ষনিকের
এ-তুরীয়, এই উচ্চতর অনুভূতি, চেয়ে দেখ।
ভয়
আজ সেই
রাত নক্ষত্রপাড়ায় আমাদের জন মদ এনেছে মেয়েরা
বউলের
গন্ধে আর এক ক্ষুধার চাবুক খেয়ে এখানে এসেছে ভিখারিরা
পেছনে
শূন্যগর্ভ ইতিহাস- সামনে একথালা ভাতের অন্ধকার
ঈশ্বর
বৃহন্নলা তুমি- তোমাকে খুন করার পর কিছু ধূমপান করার ইচ্ছা আছে আমার,
রাত্রির
এই অকৃত্রিম পানীয় জীবনের কেন্দ্রে বসে জীবনবিরোধী গান গায়
“ এ মদ কিনেছি আমরা শরীর বেচা পয়সায় ; যদি ভালবাসা করতে হয়
জানবে এই
নিটোল নিজস্ব নদীটি ভরা আজ কানায় কানায়-“
হে
বনানীর দেবতা মানুষকে একা দেখে আততায়ী হয়ে ওঠে তোমারও হৃদয়!
বস্তুতপক্ষে
আমার মজ্জা মাংস ছাড়া তোমারও নাই আর কোন আশ্রয়!
গোলাপ
নামে বাজারের মেয়েটি নিজেকেই ভালবাসা বলে জানে-
একার
বেদনায় প্রত্যেক কুঁড়ে ঘরে একটি নক্ষত্র এসে নামে
গোধূলির
পাখি শরীর ভরে একটুকও নীরবতা আনে-
মায়াচাঁদ
বিবর্তনের মাংসাশীকে একা করে বনে
কোন কোন
হৃদয়ে ভালবাসা জাগে পাশবিক অনুষ্ঠানে !
ম ম করছে
বউলের গন্ধ- সব নক্ষত্রই নগ্ন হয় ভিখারির সামনে।
মানুষের
নিষ্ঠুরতায় কালো এ রাত্রিতে শুধু ফুলের অধিকার
এক
ভিখারিনী জানে মালিকরা এসে শরীরটি দাবি করবে তার-
জীবন্ত
জীবনের হাসি হাসছিস তুই রে জীবনবিরোধী অবতার !
মাংসে
যদি একটু নুন মাখিয়ে দি সেতাই হবে তোর
সম্পূর্ণ আহার ।
সকলেই
সশস্ত্র আমরা তাই আবহাওয়াতে এত সংশয়
উড়তে বড়
কষ্ট হয় কিন্তু মাটিতে কেন এত ভয় !
মৃত্যুহীনা
মৃত্যুহীনাকে
কাঁধে নিয়ে মরনশীল আমরা দাঁড়িয়ে আছি
এ মদ বড়
আন্তরিকঃ বারবার পাত্রটিকে শুধু চুম্বন করেছি,
আমাকে
বিমূর্ত দেখে বাগানের সব ফুল তুলে ভরাও সাজি
এই মদে
মাতাল হয়ে স্বাধীনতার কথা ভুলে গেছে কয়েদী
আমার
ভালবাসা পাবার পরই তুই হয়েছিস আমার বিবাদী,
যন্ত্রনার
মূর্হূতে শরীরের পোকাগুলি বলে, ‘আমরা তোমাকেই ভালবাসি’
পরজীবীর
সুখ গোপন করতে মুখের আড়ালে লুকিয়ে রাখিস হাসি-
পশুদেরই
শুধু ধর্ম আছে আমরা ধর্মহীন বলে নিজের নগ্নতাকে ঢাকি !
মৃত্যুর
ভাবে এই মদ মাতাল করে আমাকে- রাত্রির অরন্য এই হৃদয়
জালিয়াৎ
শুধু হেসে গেলি কালপুরুষ থেকে সপ্তর্ষিমণ্ডলে যাবার সময়,
আতুর বলে
জানি ভালবাসার সময় কোষে কোষে ভয়ের জন্ম হয়
কানা
হয়েও গুপ্তচর দুই হাতের সম্মোহনে আমাকেই খুঁজে পায়
দুঃখ জয়
করতে এসে এক ষোড়শীর পেটে দুঃখকেই প্রোথিত করে যেতে চায়
রক্তের
স্বাদ নোনতা নয়, মিষ্টি বলে পৃথিবী আরও রক্ত চায়,
যে দেশে
নবান্ন, সেখানেই গাছ আর পাখির একসাথে বন্ধন মুক্তি হয় !
এ
রাত্রির শেষ নেই, ছোটলোকের দল শুধু মদটুকু হাতে নিয়ে এখনও বসে আছি
তোকে যে
নামিয়ে দেব সে উপায় নেই- তুই জীবনের এত কাছাকাছি-
নিজের
খাবারটুকু তুলে নিয়ে অন্যের খাবার নষ্ট করা, মাছির দ্বৈতজ্ঞান আমরা পেয়েছি
বিষে
বিষক্ষয়- এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে আরও বিশৃঙ্খলা হয়ে গেছি
ঘৃনাকে
গ্রহনযোগ্য করার জন্য আমাদের মুখে বসে পুরীষের মাছি
চাঁদের
আকাশে সূর্য ওঠায়, বরফ গলে, রক্তে ঢুকে পড়ে নদী
অনুচ্চারিত
চিৎকার হিসাবেই থেকে যাব আমরা যত অপরাধী!
জীবনের
মানচিত্র বুকে আঁকা আছে, শয়তান তাই তোর এত হাসি,
চৌম্বকক্ষেত্রটির
অন্ধকার অনুসরন করে তুই উড়ে চলে যা পাখি,
মৃত্যুহীনাকে
কাঁধে নিয়ে মরনশীল আমরা এখনও দাঁড়িয়ে আছি
অস্ত্রের
স্বপ্ন দেখো বলে সহবাস কালে অস্ত্রের অনুভূতি পাও তুমি,
আমার এক
অংশে এক অবধূত আছে অন্য অংশে আছে তার যোগিনী!
হরি
সন্ন্যাসী
হরি সন্ন্যাসী শ্বাপদ হয়ে ঢুকল গিয়ে মেয়েমানুষের ঘরে
কতক্ষন ফুলের আয়ু নরম কনিষ্ঠা জানে, আমাদের তৈরি
ওষুধ শূন্যের শ্বাদন্তকে গ্রহনযোগ্য করে- জাদুকরের হাতে
হৃদয় কখনও পাথর কখনও কবুতর, বিচার করা গণিকারা
অবশেষে উঠে এল স্বপ্নের দরে, রক্ষিতা হৃদয় কুকুরের মত ঘোরে
কয়েকটা উপমানুষ শুধু শেষ অধ্যায় পর্যন্ত আকন্ঠ নেশা করে
ঘাঘরা পরা অভিনয়কালে একে একে ধর্ম যায় বারোটি গণিকার ঘরে –
শোন তবে রূপরেখাহীন মানুষ রহস্য-রজনীর ভোর হবে আজ
যে ছিল নাগর, দাঁড়ি গোঁফ কামিয়ে নিয়েছে বহূবল্লভার কাজ –
কৌশলে গুপ্তচর লড়াই বাধিয়ে দেয় খুনি আর ভিখারিতে
ভাগ্যবতী যৌনতা চাকার মত চলে, কালোয়ারের দেবযানী
ঘেন্না করেও অহিংসার পথ ধরে- দেখব মন্ত্র তোকে তোলে
কত উপরে ! হারানপ্রাপ্তি বসন্তে পাখি ডেকে ওঠে বর্তমান চিরে –
মাজাঘসার কাজ শেষ করে হরি সন্ন্যাসী মাকে ভিক্ষা দিতে যায়
জাহাজ-বাঁধার ঘাটে, উলধ্বনি উঠছে, হিজড়েদের বিবাহবন্ধন অনুষ্ঠান
হচ্ছে আমাদেরই ভগবানের সাথে-
ভালবাসা বারবার সমুৎপন্ন বিশ্বাসঘাতকের হাতে-
এখানকার বাজারে ঋতুফল আছে- উচ্চবর্ণ ভালবাসা ক্ষুধা আশ্রয়
করে বাঁচে, আত্মজ অন্ধকার জীবন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে তোকে
মারবার আগে সব বুড়ো মিলে ধর্ষন করে গেল যুবতী ডাইনিকে
আমাদের জ্ঞান মৃত্যুর আলোকে শুকনো গুয়ের মত পড়ে থাকে
বাড়ন্ত এই বিহারে রাত্রি নামে উপসনার কালে, উড়বার পাখাদুটি
খুলে পড়ে তৃতীয় যামে – হরি সন্ন্যাসী খুন হল প্রকাশ্য
দিবালোকে।
অপ্রাসঙ্গিক
জীবনের
উৎসব নয় মৃত্যুর ক্ষুধা নিয়ে জেগে আছি আমরা
মাটির
বুকে খনিজের মত লুকিয়ে ছিলাম ; সূর্যহীন শান্তি
ভালবাসা
নেবার মত প্রসারিত হতে পারে নি বামন, অথবা
দেবার মত
তার কিছু নাই বলে ঈশ্বর বলোতো তুমি
হৃদয়ের
গর্তে বসে খুনি কার পূজা করে- আসবাবে ভরা
শোবার
ঘরে আমার স্ত্রীলোক চেঁচিয়ে ওঠে ঘুমের ঘোরে
গণিকারা
বেছে নিয়েছে জীবন তাদের, আমাদের ভালবাসা ছেড়ে।
এখানকার
সীমাহীন রাত্রি আমাকে ক্রুদ্ধ করে, নক্ষত্রগুলি
আমারই
রক্ত মাংস চায়- কোথায় যে জীবনের চাঁদ সমুদ্রের বুকে
ভেসে
থাকে, কখন যে তৃনশস্যলতা আমাকে প্রকৃতি বানায়
পায়ুপ্রদেশ
থেকে এক ব্যাথা মাথা পর্যন্ত শিরশির করে আসে
নিজের
মুখে হাত দিয়ে হঠাৎই তার আকার পাই না খুঁজে
আমারই
সৃষ্ট চরিত্রেরা ঘোরে এখানে আমার ই খুনির বেশে
আমারই
স্বপ্ন আর মেয়েমানুষেরা ভেজে আমারই শরীরের রসে
চিৎকার
শিৎকার মনে হয় আমারই জীবনের উনচল্লিশ খাঁজে
আমাদের
সামনে এক প্রভাত হয়েছিল পেছনেও এক প্রভাত আছে
যন্ত্রনার
শব্দ শোনা মাত্র চুলের মুঠি ধরে হিঁচড়ে তুলি তাকে
‘খা, পংক্তি ভোজনের পর যা পড়ে আছে’- মরবি এবার তুই
আকাশের
বিদ্যুৎ ব্যাহত হয়েছে এ অরণ্যের প্রতি গাছে গাছে
আমার
শূন্যতা ভরা শব্দ গুলি অর্থ পায় শিশিরে আর ঘাসে
জীবনের
উৎসব নয়- ভয় পরস্পরকে কাছে টেনে আনে
পাত্রটি
যেমন ছিল তেমনি আছে কেবল নিজেরই শুন্যের টানে
অপ্রাসঙ্গিক
হয়ে গেছে ; এ ছায়া নাটকে বাস্তব ছিলাম আমি
ধর্ষনকারীর
ভালবাসা কিছু বেশি ছিল- জল আজও নিম্নগামী
উন্মুক্ত
আমি তাই দুর্বল ; ভালবাসা দেবার সময় লিঙ্গ আর হৃদয়
একই
সঙ্গে উত্তেজিত হয়েছিল বলে সহবাসকালেই তাদের গ্রহন করে,......খায়
ইন্দ্রিয় চলাচল
কিছু স্বপ্ন আমাকে অভিভূত করে কিছু স্বপ্ন আমাএক নষ্ট করে
আমারই বুকের উপর চেপে থাকে ন্যাংটো সরস্বতী, বাস্তবে
আমি যতটা নিতে পারি তাকে তার চেয়েও কিছু বেশি,
পাহাড় থেকে নামছে নদী, এইভার- দমবন্ধ চাপ আমি ভালবাসি
জানি যতই প্রসারিত হোক তোমাদের ঐ আকাশ, যত পথ
তোমরা আবিষ্কার করবে- যত আনন্দ খুনিকে দাও
গণিকার নেশা গুলিভরা বন্দুক- কল্পনাসিদ্ধ শরীরে মিশে যাবে-
পাখিটিকে যতবার গুলি- কর শূন্যে এবং স্বপ্নে সে ভাসে-
অরণ্য থেকে আকাশে ওঠার আগেই এক সমস্যা দেখা দেয়,
সমূল উৎপাটিত বোঝা নিজের বুকে তুলে নেয় লিপিসরস্বতী,
মৃত্যু স্তম্ভিত হয়- সাপের মত শব্দচেতনা নিয়ে আমি রাস্তা
পরিবর্তন করি- মুখ দিয়েই বুঝতে পারি ইন্দ্রিয় নয় তার যোনি
অজানা শহ র উর্দ্ধমুখী পথ- পাতালে প্রবাহিত নদী
ফুল আর স্বপ্নে শিহরিত ছিল আমাদের শরীর এখন বিপরীতমুখী
সহবাসে অর্দ্ধমানুষ তা পূর্ণ
স্ত্রীলোএর কাছে সবকিছু করছে দাবী
বুঝতে পারি আরও হাল্কা হতে হবে আমাকে, ত্যাগ করতে হবে রাগ
আর ভালবাসা- ক্ষুধা তো শুধু জীবনের নয় মৃত্যুরও ধর্ম-
অপূর্ণই থাকি যদি তবে সসাগরা হয়েও শূন্য থাকে তোমাদের
হৃদয় জরায়ু..... নতুন এই পৃথিবী বুকে তুলে নিয়েছে সরস্বতী
স্বপ্নের বোঝা.....ইন্দ্রিয় চলাচল—পার্বতী
স্তনদুটি শূন্যের মুখে ভরা
মহাকাশ মহাশূন্য
নক্ষত্রহীন
আকাশ....স্বপ্নলোকের ছায়া, তোমাদেরই আমি সম্বোধন করি..
এসো
সরস্বতী, এবারের বসন্তে আমরা মাটি থেকে শূন্যে জেগে উঠি,
এখানেই
আমাদের পরিচয়, দূরত্ব ও ব্যবধান...এখানেই আমাদের সহবাস,
এখানে যে
সূর্য ওঠে তাকেই আমরা কাছে পাই- সকলের মাঝখানে থেকে
হঠাৎই বড়
নিঃস্ব বোধ করি- যথেষ্ট দূরে আছি বলে মাধ্যাকর্ষণ ছিন্ন হয়,
যে নিয়মে
একদিন আগুন ছিলাম সেই নিয়মেই আবার মাটি হয়ে যাই।
তবে
নিঃস্বত সম্পর্কে আরও কিছু কথা আছে- মানুষেরই রক্তে ফুল ফোটে
এ শূন্যে
এখনও কিছুটা জায়গা আছে- পাহাড় আর সমুদ্র ভালবাসার দুই চিহ
ছুরি আর
বন্দুক ফেলে দিতে হল তাও ধর্ম আছে বলে নয়,দরিদ্র যে চায় অন্ন !
য আমি
চেয়েছি তাই আমি পাই- তারপর এক অন্ধকার নামে- যে মাঠে
সন্ন্যাসী
শুয়ে আছে- বুকে এক ফুল, উদ্দীপনাময় – গণিকারা
চেনে তাকে
এ আকাশের
রং ক্লে পালটে দেয়- কালো মেঘ আর তার পালিত পাখি ভিন্ন?
দুঃখে
মানুষ কাঁদে কিন্তু দেবতারা তাকে প্রতিভাত করে খুনে আর ধর্ষনে-
আমার
মাস্তুল সমুদ্রকে চায়, কল্পনায় ভেজে,প্রতিটি জোয়ারের টানে !
আগুনের
ধর্মে যে জ্বলে সেই হয় মাটি আর জল- অস্থিমজ্জা
আর-এক নির্সগ আনে-
না-শোয়া
শব্দতরঙ্গগুলি একে একে জড়ো হয়, বলে, ‘পার হও
দেখি এ
দূরত্বসমুদ্র,
ভালবাসায় স্বচ্ছ করো কালো এ আকাশ’- আদিবাসী শরীরের ঘ্রানে
শিউরে
ওঠে প্রতি লোমকূপ- কি ভাবছো সরস্বতী, পা তোল আমার বুকে-
অনাবিষ্কৃত
ধাতুর মত গোপন থেকে যাব আমরা- কুয়াশার মত ভেসে বেড়াই
যখন,
অর্থ আর তাৎপর্য সব হারিয়ে মিশে যাই মানুষ আর পাখিদের গানে !
কালো এই
রাত্রির বুকে আমরা কি যে খুঁজে পাই, বুক থেকে রক্ত ঝরেছিল বলে
আজ সে
ফুলেদের চেনে... একা আছি এ উপত্যকায়...লিপি সরস্বতী হলে,
পাহাড় আর
তার বুকে প্রপাতের মত ওতঃপ্রোত হই... ছিন্নভিন্ন করি সংসার
সুর্যকে
পেয়েছে বলে গাছ সবুজ, বহন করে নিজের ওজন আর শুন্যতার ভার !
এ
নির্সগে মৃত্যু আর কল্পনা নয়- স্বপ্নের শবের উপর সন্ন্যাসীর আরাধনা-
ফুল তাকে
চিবিয়ে খাই, পাপড়ির অন্ধকারে আমি পুরোপুরি কানা,
সরস্বতী
পা তোল- সম্মোহিত আকাশ আসছে নেমে....রক্তের জোয়ার
শুরু হলে
ধূলিময় শূন্যে নক্ষত্রের খেলা....ছড়িয়ে দাও পাখা আকাশের নৌকা!
দৃষ্টিহীন
যে সেই বেদনাহীন- আমি যে দেখেছি তোমার অভাবনীয় আকার
এ
মহাশূন্যে প্রবেশ করার আগে উন্মুক্ত কর ঊরু, স্তন, যোনি আর পা।
ব্রম্ভ
পাছে দোষ আসে তাই মদ মৎস্য
মাংস মুদ্রা নারী
সভয়ে এড়িয়ে আমি এতদিন রয়ে
গেছি সৎ ।
কোনো পাপ করি নাই জীবনে
জ্ঞানত ;
মেয়েদের মসৃণ গোড়ালি দেখে
কুন্ডলিনী কামভাব জাগে,
সুতরাং চোখ ফিরিয়ে,
শূন্যময় নিরঞ্জন ধ্যানে
দৃষ্টির কপাট বন্ধ করেছি
চঞ্চল কতদিন ।
শোলার কদমফুলে উদ্দীপন
ঘটে;
আঙুর, পুঁতির
গোছা-চতুর্দিকে ভনভন মাছির বাজার-
বেশির ভাগ যুব কবির লেখা
পাণ্ডুমুখে এড়িয়ে চলেছি,
শুধু ধর্মপ্রাণ বঙ্কিম
প্রেছি, শুধু গীতা,রামকৃষ্ণ ।
আমিই ধর্ষণ করি আমিই
ধর্ষিতা ।
আমিই সিঁধেল চোর তেল মেখে
চিকচিকে শরীরে
ঊধ্বশ্বাসে দৌড়ে যাই,
এঁকেবেঁকে, বকুলের কাঞ্চনের আড়ালে
জ্যোৎস্নায় ;
আবার বমালসুদ্ধ একদিন
গ্রেফতার হই ।
আমিই পুলিশ, আমিই ছোরার
ছন্দে হেসে এক কোপে নামাই শিকার ;
আমি গাধা-গাধী উল্লাসে
মৈথুন করি প্রকাশ্য রাস্তায় ;
বেহেড মাতাল আমি সচিত্র
পেখম পরে নাচি-কুঁদি ময়ুরীর পাশে,
ঘুষ দিই, ঘুষ নিই, আয়কর
ফাঁকি দিয়ে আমিই যক্ষীর
পায়ে রাখি- এই ব্রম্ভজ্ঞান
নিয়ে সংসারে ফিরে যা।
একবার সাটিন ঊরুর তু
দৃঢ়মুষ্টি ভেঙে দেখ দিকি
আমার মতোই দিব্য মজা পাস
কিনা ।
ফুসমন্তর , আজ থেকে লম্পট
হয়ে যা ।
*******************************